ফরিদপুরের সদরপুরের শত স্বপ্ননীড় থেকে আলফাডাঙ্গার স্বপ্ননগর; জেলার নয়টি উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প -২ এর অধীনে নির্মিত প্রত্যেকটি ঘর যেন ভূমি ও গৃহহীন মানুষের কাছে এক স্বপ্নের ঠিকানা, পরম নির্ভরতায় স্থান। তাই তো এবারে ঈদকে বড়ই আনন্দের তাদের কাছে। যেনু আল্লাহ বা ইশ্বর নিজ হাতে তাদের দিয়ে বসবাসের ঠিকানা।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর পেয়ে বোয়ালমারীর চতুল ইউনিয়নের সুকদেবনগর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী বিধবা নারী রাহেলা বেগম।
তিনি জানালেন, ‘আমার ইট্টু জমি হবে, একখান ঘর হবে, এই কথা স্বপ্নেও ভাবি ন্যাই। তয় এইবার আল্লা মুখ তুইল্যা তাকাইছে। মাইয়াগো নিয়্যা জীবনে এই পথমবারের মতো এট্টা ঈদ করবো নিজের ঘরে! আমি অহন নিজের এট্টা ঠিকানা পাইছি।’
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৬শ’ ৭ ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। আর ওই ঘরের জমিও তাদের নামে কবুলিয়াত দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। এখনো সামান্য কিছু ঘরের কাজ বাকি আছে। অনেক ঘরে এরইমধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তরা উঠে পড়েছেন।
বোয়ালমারীর সুকদেবনগর গ্রামের ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেকটি ঘরের মালিক আবদুস সামাদ শেখের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, ‘আমাগের মতো গরিবের জীবনতো পথে পথেই শ্যাষ হইয়্যা যায়। কেউ হয়তো বিপদের সময় চাইল, ডাইল, কাপড় দেয়; কিন্তু জমির সাথে ঘর দিয়ার কথা শুনি ন্যাই। আমাগো শেখ হাসিনা আমাগের জন্য এই ব্যবস্থা কইর্যা দিছে। আমরা তাঁর প্রতি চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ উনারে আরো অনেকদিন বাঁচায় রাখুক।
জেলার সদর উপজেলার কানাইপুরে ইব্রাহিমদি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে সাতটি সারিতে ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলোতে এরইমধ্যে অনেকেই মালামাল নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। সকালে গিয়ে দেখা গেলো সেখানকার বাসিন্দারা কেউ ঘর গোছাচ্ছেন, কেউ রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। ঘরের কোনার জমিতে এরইমধ্যে নানাজাতের ফুলের গাছসহ ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করেছেন অনেকে।
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ফকির জানালেন, আমরা একেবারে হতদরিদ্রদেরকেই বাছাই করে এসব ঘরের তালিকা পাঠানোর পরে সে অনুযায়ীই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এইসব পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেয়া ভিজিডিসহ নানা সাহায্য করা হচ্ছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা জানান, একদিন যে মানুষগুলোর কোন ঠিকানা ছিল না, ছিলনা বসবাসের জন্য একটুকরো ভূমি, মাথার উপরে একটি ছাদ; বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পাকা ঘর পেয়ে প্রত্যেক উপকারভোগী ও তার পরিবারে নেমে এসেছে আনন্দের বন্যা। তাদের চোখে মুখে আজ পরিতৃপ্তির হাসি। অনেকের জীবনে এবারকার ঈদ ধরা দিয়েছে এক পরম পাওয়ার ঈদ হিসেবে। নীড়হারা আশ্রয়হীন মানুষগুলো খুঁজে পেয়েছে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম জানান, এই স্বপ্নের ঠিকানা কে কেন্দ্র করে বিকশিত হচ্ছে সামাজিক ও গ্রামীণ অর্থনীতি। প্রত্যেকটি ঘর যেন এক একটি অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দতে পরিণত হয়েছে। আগে যেখানে সব সময় আশ্রয়ের চিন্তায় ব্যস্ত থাকতে হতো, আজ সেই নিশ্চিত আশ্রয় পেয়ে উপকারভোগীরা তার ও তার নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবন ব্যবস্থাটাকে পাল্টে দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আলফাডাঙ্গায় স্বপ্ননগরী নামে নতুন একটি গ্রামের সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে মানুষের জীবন জীবিকার জন্য হাট বাজারও তৈরি করা হয়েছে। অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় শুধুই অনুভবের বিষয়। তিনি বলেন, এইসব মানুষ এখন নিজের জীবন বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করানোর স্বপ্ন দেখছে। নিজের যে একটি স্থায়ী ঠিকানা সেটি তারা খুঁজে পেয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার বাসস্থান নিশ্চিত হয়েছে। এই কোভিড-১৯ সমস্যা মোকাবেলায় আমরা তাদের ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছি। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের চোখে মুখে এখন পরিতৃপ্তির হাসি। অনেকের জীবনে এবারকার ঈদ ধরা দিয়েছে এক পরম পাওয়ার ঈদ হিসেবে। নীড়হারা আশ্রয়হীন মানুষগুলো খুঁজে পেয়েছে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।