করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে ঈদ আনন্দে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ হয়নি। বরং করোনাভীতি ভুলে শিশু-কিশোর-তরুণরা ভিড় করছে নদীর তীরে। একঘেয়ে অবস্থা থেকে একটু মুক্তি পেতে তারা দলে দলে ছুটছেন মুক্ত পরিবেশে।
ঈদের দিনের মতো রংপুরে তিস্তা-ঘাঘট, যমুনেশ্বরী-করতোয়া নদী কেন্দ্রিক স্পটগুলোতে দ্বিতীয় দিনেও বিনোদনপ্রেমীর ঢল নেমেছে। যেন নদীর তীরে মানুষের ভিড়ে নির্মল বিনোদনের বাতাস বইছে। বর্ষাকাল আর আগাম বন্যার পানিতে যৌবন ফিরে পাওয়া এসব নদ-নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন ভ্রমণপিপাসুরাও।বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, বদরগঞ্জ ও সদর উপজেলার নদ-নদীর তীর ও বিভিন্ন সেতু এবং ব্রিজ ঘিরে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এসব স্থান।গঙ্গাচড়ায় শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর মহিপুরঘাট প্রান্তে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন রংপুর নগরের শালবন এলাকার স্কুলছাত্র রওশন, জাহিদ ও নির্জাস।
এসব শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। ঘরবন্দি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। এনকারণে ঈদে বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বের হয়েছেন। দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে বের হওয়া ঠিক না; তারপরেও কিছুক্ষণের জন্য ঘরবন্দি দশা থেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে বাইরে এসেছেন।শত শত মানুষের পদচারণে মুখর মহিপুরঘাটে তিস্তার পাড়ে বসে থেকে, ছবি তুলে, আবার কখনো নদীর বুকে নৌকায় ভেসে সময় কাটাতে দেখা গেছে আগত ব্যক্তিদের। সেতুর দুই প্রান্তেই ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের ভিড়ে শিশু-কিশোররা আনন্দে মাতোয়ারা।একই চিত্র কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু এলাকায়। রংপুর নগর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এই সেতুর অবস্থান। সেখানে নদীর বুকে বড় বড় নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। অনেকে আবার যান্ত্রিক নৌকায় লাউড স্পিকারে গান বাজিয়ে উল্লাস করছেন।
সেখানে কথা হয় রংপুর সরকারি কলেজে অনার্স পড়ুয়া সোয়েব মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার কারণে আগের মতো আর আড্ডা, চলাফেরা হচ্ছে না। সবার মধ্যে একটা দূরত্ব কাজ করছে। অনেক দিন ধরে নদীতীরে আসাও হয় না। এবার নদীতে বন্যার পানি বাড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশটাও বেশ ভালো। একারণে মোটরসাইকেল চালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি।ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এসেছেন মুশফিকুর রহমান। ঈদের দিনের ব্যস্ততা শেষ করে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিস্তার তীরে ঘুরতে এসেছেন এই চাকরিজীবী।
মুশফিকুর বলেন, একটা সময় প্রতি বছর ঈদে আমাদের ট্যুর থাকত। ঈদের তিন দিনই আমরা ঘোরাঘুরি করতাম। বাইরে যাওয়া, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, কত কিছু। এখন আর এসব হয় না। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন তো ঘর আর অফিসের মধ্যেই বন্দিদশা। এভাবে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই মোটরসাইকেলে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে আসা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীর তীর, নাগেরহাট ব্রিজে, পীরগাছার ছাওলায় বোল্ডারপাড়, আলীবাবা থিম পার্ক পয়েন্ট, পীরগঞ্জে করতোয়ার তীর, ড. এম ওয়াজেদ মিয়া সেতু ও রংপুর নগরের ঘাঘট নদীর প্রয়াস পার্ক এবং মনোহরপুর শিংগীমারী রেলসেতু এলাকায় অসংখ্য মানুষ উন্মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।বিনোদন পেতে নদীর তীরে, সেতুতে বা ব্রিজে বসে ছবি তুলে, ভিডিও ধারণ করে সময় কাটাচ্ছেন। আবার অনেকেই নিরিবিলি পরিবেশে সবুজ ঘাসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
এসব উন্মুক্ত স্থানে বসানো হয়েছে হরেক রকম অস্থায়ী খাবারের দোকান। শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে খেলনার পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতাদের হাঁকডাক। মোটরসাইকেল ছাড়াও অনেকেই প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানে করে নদীতীরবর্তী সেতু এলাকায় ভিড় করছেন।