আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বর্দী এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। পুরুষ শুন্য এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে ভাব, অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আগামী ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থিরা। আর এই কারণে নিজেদের আধিপত্যকে টিকিয়ে রাখতে ঘটছে ছোট বড় মারামারি, হামলা, সংঘর্ষের মতো ঘটনা।
শুক্রবার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনার গ্রুপ ও গত নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থি মান্নান মাতুব্বর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে।এতে আহত হয় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন। এদের মধ্যে গতরাতেই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চেয়ারম্যান গ্রুপের কৃষক শহীদ ফকির (৪৭)।শহীদ ফকিরের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌছলেই রাত থেকে দফাদফায় কাটা খাল ও ফকির পাড়ার অর্ধশত বসবাড়ি ও দোকান পাটে হামলা ও লুটপাট চালায় নিহত পক্ষের সমর্থকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিপক্ষের মামলার ভয়ে পুরো এলাকা পুরুষ শূন্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।নিহত শহীদ ফকিরের বাড়ী ছাড়া অন্য কোনো কোনো বাড়িতে পুরুষ সদস্যদের দেখা মেলেনি।ভীত সন্ত্রস্ত নারীরা বর্ননা দেন লুটপাট ও হামলাকারীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের। ক্ষতিগ্রস্ত পরমেশ্বর্দীএলাকার বাসিন্দা লতিফা বেগম(৩৫) জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে পার্শবর্তী খারদিয়া গ্রামের লোকেরা তাদের বাড়ীর গোলা থেকে ধান ও পাট লুট করে নিয়ে যায়। দেশী অস্ত্রের মুখে আমরা নিজেরাই ঘরের তালা খুলে দিতে বাধ্য হই।তিনি জানান, তাদের আকন গোষ্ঠীর পুরুষ সদস্যরা শুক্রবারের দিনের কাইজায়(মারামারিতে)অংশ না নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের নিজ গ্রামের লোকেরাও তাদের এখন হত্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে।
ওই গ্রামের অপর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার রুবেল আকনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার (২৫)জানান,‘হামলাকারিরা আমাদের বাড়ী গরু, পাট, পিয়াজ এমনকি ফ্রিজটাও লুটে নিয়ে গেছে।বাধা দিতে গেলে গলায় রামদা ধরে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে গেছে।পাশের বাড়ীর প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ীর তিনটি গোয়ালের ১০টি গরুই নিয়ে গেছে ওরা, বাড়ীর মজুত যা ছিলো সবই বস্তায় ভরে মাথায় করে লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ঘরে খাবার কিছুই নেই।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরল আলম বলেন, ‘এলাকায় নতুন করে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর রয়েছি, মারামারির ঘটনায় কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও প্রকৃত অপরাধিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’ ঘটনাস্থল পরিদশনে আসা পুলিশের মধুখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার সুমন কর জানান, পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুতম সময়ের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থিরা সরবর। এ কারনেই তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। এই থেকেই নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি মতো ঘটনা ঘটছে।