ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদো ৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মেহেদী হাসানের নাম সুপারিশ করার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। এই ঘটনায় উপজেলাব্যাপী আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ। সেইসঙ্গে নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহবান করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য মেয়াদউর্ত্তীন কমিটির সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতার রাজনৈতিক প্রতিনিধি শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সম্মতিতে মেহেদী হাসান এবং রোমানকে যথাক্রমে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য সুপারিশ করে একটি তালিকা জেলা ছাত্রলীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মেহেদিকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি আমি লাবু চৌধুরী ভাইকে জানিয়েছি। বিতর্কিত কাউকে যেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি না বানানো হয় সে অনুরোধও করেছি।
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ মেহেদী হাসান নগরকান্দার সদরবেড়া পশ্চমপাড়া গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর উপর হামলা চালিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অফিস ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সংঘবদ্ধ ডাকাতির মামলার আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশের সবুজ সংকেত পেয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদটি পেতে ব্যাপক লবিং ও দৌড়ঝাপ করছেন মেহেদি। তবে এ ঘটনায় একটি অংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তিব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। উপজেলা ছাত্রলীগের মেহেদি বিরোধী এই অংশের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে তালমা এলাকায় স্থানীয় লোকদের মারধর, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট ছাড়াও মেহেদী হাসান স্থানীয় মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা গড়ে এলাকায় মাদক কেনাবেচা ও সেবনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর করে। বর্তমানে তিনি নাশকতার মামলার আসামি হয়ে পলাতক আছেন।
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নগরকান্দার গুরুত্বপূর্ণ তালমা ইউনিয়নে নিজস্ব আধিপত্য বিস্তার করার জন্যই মেহেদি হাসানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ, ওই এলাকায় লাবু চৌধুরীর বিপক্ষে দীর্ঘদিন সক্রিয় আছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া। আগামী সংসদ নির্বাচনেও তিনি লাবু চৌধুরীর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। আর তালমায় জামালকে ঠেকাতেই মেহেদিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
এব্যাপারে মেহেদী হাসান বলেন, রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই প্রতিপক্ষ বিভিন্ন সময়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এখন আমাকে মাদক কারবারিদের দোসর হিসেবে অপপ্রচার করছে। নেতার নির্দেশনার বাইরে আমি কখনোই ব্যক্তিগত কোন হামলা-মামলায় জড়াইনি।
এব্যাপারে অবশ্য নানাভাবে চেষ্টা করেও শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজীদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, জেলা ছাত্রলীগের অনুরোধে লাবু চৌধুরী একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। এসব তথ্য কঠোর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রস্তাবিতদের বৃত্তান্তযাচাই-বাছাইয়ের জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দিয়েছি। রিপোর্টও এসেছে। আরেকটু দেখে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।