ভরা মৌসুমের শুরুতে পিরোজপুরের কাউখালীর কচা, সন্ধ্যা ও কালিগঙ্গাসহ পাঁচটি নদীতে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছে না। ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ধারদেনা করে চলছে জেলে পরিবারের সংসার।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর জানায়, উপজেলায় দেড় হাজার জেলে রয়েছে। এদের অধিকাংশই কচা, সন্ধ্যা, গাবখান ও কালিগঙ্গা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রতিবছর মে মাসে কিছুটা কম থাকলেও জুন মাসের শুরু থেকেই জেলেদের জালে ধরা দেয় রূপালি ইলিশ। কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পেয়ে হাসিতে ভরে ওঠে জেলেদের মুখ। সারা বছরের ধারদেনা শোধ করতে থাকেন দরিদ্র জেলেরা। মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় শেষে জুন মাস গিয়ে জুলাই মাসও শেষ হতে চলছে ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। দলে দলে নদীতে গেছেন ইলিশ শিকারের আশায় জেলেরা। কিন্তু কোথায় ইলিশ?
মাইনুল,ফোরকান মাঝি,কাওসার, ইউনুছসহ বেশ কয়েকজন জেলে জানান, এতদিন নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো এবং লকডাউনের মধ্যে আমরা কোন কাজ করতে পারি নাই সরকারী যে সাহায্য পেয়েছি তা চাহিদার তুলনায় কম।
নদীতে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে ক’টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেল খরচও উঠছে না।
অন্যদিকে জেলেদের দাদন দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।
জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না, নদীর তীওে নৌকায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন উপজেলার হাজার হাজার জেলে। বেশিরভাগ জেলে আবার ব্যাংক ও এনজিও ঋণের কিস্তির ভয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন না। এদিকে নদীতে যে যৎসামান্য ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,কচা, সন্ধ্যা ও কালিগঙ্গা নদীর গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।এর ফলে নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। নদীর যে সব অংশে জাটকা ইলিশ বড় হয় সে রকম ৮/১০টি স্পট দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইলিশ না পেয়ে নদী থেকে প্রতিদিনই জেলেদের প্রায় শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে।
ইলিশের আকালে উপকূলীয় এলাকার শতাধিক জেলে পল্লীতে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। ইলিশ আহরণের মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটছে জেলে, আড়তদার, দাদন ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবী শ্রমিকদের। দাদন নেয়া জেলেরা দাদন শোধ ও জীবন ধারণের চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে উপজেলার বেকুটিয়া ফেরিঘাট, পাঙ্গাসিয়া, সুবিদপুর, আমরাজুরি ফেরিঘাট,ধাবরী, দক্ষিণ বাজার,উত্তর বাজার ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমের দু’মাস অতিবাহিত হলেও নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেসহ সবার মাঝে হতাশা বিরাজ করছে
এব্যাপারে কাউখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফনি ভুষন পাল বলেন, ধারণা জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য ইলিশের প্রজনন সময় পাল্টে গিয়েছে। অবশ্য এ বছরের প্রথম থেকে শুরু করে ভরা মৌসুমেও মাছের যে সঙ্কট তা গত বছরেও থাকলেও পরবর্তীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। তারপরও আশা করি জুলাই মাসের শেষে থেকে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর যে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় তা দিয়েই আমাদের চলতি অর্থবছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, কাউখালীর কচা-সন্ধ্যা নদীর সুস্বাদু ইলিশের খ্যাতি দেশজোড়া।প্রতিবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এখানকার ইলিশ। কিন্তু এবছর আর সেটি সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে।