পাহাড়ে যাদের বসবাস, বর্ষা তাদের জন্য আতঙ্কের নাম। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকে। ভারি বর্ষণের কারণে প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। আবার পাহাড়ে বসবাসের রীতি-নীতি মানা হয় না। যাচ্ছেতাই পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হয় আর বৃষ্টি হলেই ওই সব এলাকা ধসের মুখে পড়ে। কক্সবাজারের উখিয়ায় ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পরিবারের পাঁচ সদস্যের প্রাণহানি হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছে এক রোহিঙ্গা। এ নিয়ে বুধবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে ১৪ জন মারা গেছেন। ধসে পড়েছে অর্ধশতাধিক বস্তিও। দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর বস্তি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু বালুখালী শিবিরেই শতাধিক বস্তি টানা বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
পাহাড়ধসের এই চিত্র প্রায় প্রতিবছরেরই। বর্ষায় একনাগাড়ে কয়েক দিন ভারি বর্ষণ হলেই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের জুন মাসে পাহাড়ধসে মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। এরপর এমন শোকাবহ ঘটনা রোধে বিস্তর পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে খুব কমই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বরাবর বলেছেন, পাহাড়ধসের অন্যতম কারণ পাহাড় কাটা। দ্বিতীয় কারণ, ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের নিচে ছোট ছোট ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া। সাধারণত গরিব মানুষ কম খরচে থাকার জন্য বস্তির মতো এই ঘরগুলোতে আশ্রয় নেয়। তৃতীয় কারণ, পাহাড়গুলোতে থাকা গাছপালা কেটে পাহাড়টাকে একেবারে ন্যাড়া করে দেওয়া। এর ফলে কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে উপরিভাগের মাটি নরম হয়ে যায় এবং একসময় তা ধসে পড়ে। আবার কিছু দুর্বৃত্ত পাহাড়ের মাটিও বিক্রি করে। পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে তারা। উন্নয়নকাজেও পাহাড়ের ব্যাকরণ মানা হয় না। বৃষ্টিপাতের সময় এসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পাহাড়ধস ঘটে। এতে হতাহত হয় অসংখ্য মানুষ। তাই পাহাড়ধসে মৃত্যু রোধ করতে হলে পাহাড় কাটা বন্ধের পাশাপাশি ন্যাড়া পাহাড়গুলোকে সবুজ আচ্ছাদনে ছেয়ে দিতে হবে। পাহাড়ের নিচে বস্তি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। পাহাড় ঘিরে কংক্রিটের দেয়াল ও প্রশস্ত নালা নির্মাণ করতে হবে।
ভূ-প্রকৃতির নিয়ম না মানলে তার খেসারত দিতেই হয়। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে অনেক পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পাহাড়ের চূড়া, মধ্যবর্তী অংশ ও পাদদেশে ঝুঁঁকি নিয়ে বাস করছে হতদরিদ্র মানুষ। পাহাড়ে বসতি নির্মাণ চিরতরে বন্ধ করা না গেলে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা এমন করুণ মৃত্যু আর দেখতে চাই না। তাই এখনই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আশু ও দীর্ঘমেয়াদি দুই রকম উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে। রোধ হবে পাহাড়ে অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ ও মৃত্যু।