খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ। পৃষ্ঠ-সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও বীজ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকরা এখন আর মসলা জাতীয় ফসলের চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এক সূত্র থেকে জানা গেছে, কৃষি ফসল উৎপাদনে অন্যতম হল ডুমুরিয়া উপজেলা। এখানে রবি ও খরিপ উভয় মওসুমেই হয় সবজি উৎপাদন। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবারহ করা হয়ে থাকে। ফলে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন জুড়েই বেড়েছে সবজি চাষ। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাড়েনি মসলা জাতীয় ফসলের চাষ। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ। আর এ ফসল চাষে কৃষকের উৎসাহ হারানোর অন্যতম কারণ হল সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতার অভাব। এছাড়াও রয়েছে বীজ সংকট। উৎপাদন খরচ বেশী। উৎপাদিত মসলা জাতীয় ফসলের বাজার মূল্য কম। কম দামে নিম্নমানের বিদেশী পণ্যের বাজার দখল। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে রয়েছে- আদা, হলুদ, ঝাল, ধনে, পিয়াজ-রসুন,রাঁধুনী, জিরা, মউরী উল্লেখযোগ্য। এগুলোর মধ্যে চলতি বছরে হলুদের চাষ হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে, আদার চাষ হয়েছে ৪ হেক্টর জমিতে, ঝালের চাষ হয়েছে রবি মওসুমে ৭৫ হেক্টর ও খরিপ মওসুমে ৬৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ধনের চাষ হয়েছে ১৩ হেক্টর জমিতে এবং পিয়াজের চাষ হয় ৫৩ হেক্টর আর রসুন হয় ২৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে কৃষকের জন্য ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ করে দুইটি অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ জমিতে হলুদের প্রদর্শনী প্লট। তবে আগের তুলনায় এ জাতীয় ফসলের চাষ অনেক কমে যাচ্ছে। এক সময়ে উপজেলার সাহস, শোভনা, খর্ণিয়া, বরাতিয়া, রুদাঘরা ও মাগুরাঘোনা এলাকায় ব্যাপক হারে হলুদের চাষাবাদ হতো। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও বেশ লাভজনক ছিল। আর হলুদ চাষের জন্য খুব উর্বর জমিরও প্রয়োজন হয় না। মুলতঃ গাছের ছায়া বা বাগান জাতীয় অকৃষি জমিতে হয় হলুদের চাষ। আর মরিচ, আদা, ধনে পিয়াজ-রসুনের চাষ ভালো হয় ক্ষেতের পাশে ছায়াপূর্ণ জমিতে। শোভনার কৃষক শংকর মল্লিক জানান, উপজেলার মধ্যে চুকনগরের হাটে বেশি কেনা-বেচা হয় হলুদ-আদাসহ এ ধরনের ফসল। ভালো বীজও এখানে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে হাইব্রিডের কারণে দেশীয় বীজ পাওয়া কঠিন। বিদেশী পিয়াজ-রসুনের কারণে দেশে তার চাহিদা কম। আর কৃষি কাজে এখন অনেক খরচ। বিগত ৩/৪ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে আদা, হলুদ, ওল, কচুরমুখি, পিয়াজ-রসুনের চাষ করে লোকসান হচ্ছে। কারণ ভারত থেকে এসব সবজি আসাতে দেশীয় সবজি হারিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে এ জাতীয় ফসল ভালো উৎপাদন হবে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়ায় মসলা জাতীয় সবজীর চাষ কম হওয়ার অন্যতম কারণ হল বীজ সংকট। আর এ জাতীয় ফসল চাষে খরচও হয় বেশি। এসব কারণে কমে যাচ্ছে এর চাষ। এরপরও আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি তাঁরা যেন পিছিয়ে না পড়ে।