দিনাজপুরের বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৬ থেকে ৭টি আদিবাসি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। তাদের মধ্যে সাঁওতাল, উরাও, মাহাতো, মাহালি, মুচি সম্প্রদায় অন্যতম। আদিবাসি সমিতির নেতাদের দাবি, ভাষা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন দ্রুত প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।
জানা যায়, এই বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় প্রায় ১লক্ষ ২০ হাজার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকের বাস। এই এলাকায় বসবাসরত প্রতিটি ধর্মের লোকেরা নিজের ভাষায় বিদ্যালয়ে পাঠ্যবই থাকলেও কোন বিদ্যালয়ে আদিবাসি শিশুদেরকে নিজের ভাষার পাঠ্যবই পড়ানো হয় না। এখানকার আদিবাসী শিশুরা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই নিজ ভাষায় বই পড়ার সুযোগ পান না। কোন বিদ্যালয়েই নেই ওই ভাষার পাঠ্য পুস্তক বা শিক্ষক।
সুবাস খালকো (১০) আর প্রশান্ত মিনজি (১০) তারা দুজনেই উরাও সম্প্রদায়ে দুই শিক্ষার্থী। পড়ালেখা করেন বিরামপুরের কাটলা ইউপির রামচন্দ্রপুর আদিবাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে। বিদ্যালয়ের নাম আদিবাসি হলেও সেখানে শিশুদের পড়ানো হয় বাংলা ভাষাপাঠ্য বই। ধর্মের বিষয়েও তারা খ্রিষ্টান ধর্মের বই পড়েন।
বিদ্যালয়ে নিজের ভাষায় না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, বাড়িতে বাবা, মায়ের সঙ্গে আদিবাসি ভাষায় কথা বলি কিন্তু বিদ্যালয়ে গিয়ে সমবয়সি অনেক শিশু থাকলেও সে ভাষায় কথা বলতে পারিনা। বাংলাভাষা আয়ত্ব করতে কষ্ট হয়। আমাদের জন্য আলাদা শিক্ষকের ব্যবস্থা নেই। নিজ ভাষার পাঠ্যবই থাকলে ভালো হত।
ওই দুই শিশুর অভিভাবকরা জানান, নিজ ভাষায় পড়ার সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমাদের সন্তানদের বাংলা পড়তে হচ্ছে। যারা বাংলা ভাষায় লেখাপড়া শেষ করে তারাও নিজ ভাষা সমৃদ্ধের তেমন সুযোগ পায় না। এতে আবার অনেক শিশুই প্রাথমিকে ঝরে যায়। ভাষা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে ও শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষাদান জরুরি।
বিরামপুর উপজেলা আদিবাসি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস মুর্মু বলেন, প্রতিটি জাতীর জন্য যেমন আলাদা ভাষা রয়েছে, তেমনি আদিবাসিদেরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে। কিন্তু আদিবাসি হয়েও আমাদের সন্তানরা বাংলাভাষায় পড়ছে। বিদ্যালয়ে নিজ ভাষায় পড়ালেখার তেমন সুযোগ পায় না। প্রাথমিক থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য নিজ মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে শিক্ষা দেওয়া জরুরী। এছাড়াও প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি বিদ্যালয়ে নৃ-গোষ্ঠী থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান করলে শিশুরা প্রাথমিক থেকেই নিজের ভাষায় আয়ত্ব করতে সমস্যা হবে না।