অপরিনত বয়সে বাচ্চা প্রসব করানোর চেষ্টায় ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সহকর্মী প্রসূতি এবং নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার ‘মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল’ সাফল্যে জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রসূতি সিনিয়র ষ্টাফ নার্স আসমা আক্তারের স্বামী জাহিদুল ইসলাম সৌদি আরব প্রবাসী। সে তরগাঁও গ্রামের ধলাগড় ব্রীজ এলাকার বেলায়েতের পুত্র।
সূত্রে জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স আসমা আক্তার গর্ভবতী হওয়ায় গত রোববার দিনব্যাপী ওই হাসপাতালের ডাক্তার ও সহকর্মীরা বাচ্চা প্রসব করানোর চেষ্টা করে। জন্মের পর নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাতেই উত্তরার হাইকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে প্রসূতির মৃত্যু হয়। বিগত সাত বছর আগে তার প্রথম সন্তানটি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হলেও সহকর্মীরা তা গুরুত্ব না দিয়ে পর পর দু’টি ইনজেকশন পুশ করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা তাদের কৃতিত্ব জাহির করতে বলপ্রয়োগে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে প্রথমে তাকে গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থা আরো খারাপ হলে উত্তরার হাইকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। প্রসূতি পরিবারে সদস্যদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা স্বাভাবিক প্রসবের সিদ্ধান্ত নেয় বলে অভিযোগ।
গাইনী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু প্রসূতির প্রথম সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হয়েছে, তাই দ্বিতীয় সন্তানটি স্বাভাবিক নিয়মে প্রসব করোনোর চেষ্টা করা ঠিক হয়নি। বলপ্রয়োগের ফলে প্রসূতির জরায়ূ মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এব্যাপারে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুস সালাম সরকার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, অপরিনত বয়সে বলপ্রয়োগে প্রসূতির বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স আসমা আক্তারের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। জরায়ূ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরামর্শ অনুযায়ী তাৎক্ষনিক তাকে ঢাকায় নিতে দেরী হয় এবং পরে সে মারা যায়।
উল্লেখ, মাতৃমৃত্যু শূন্যের কোঠায় এনে সারাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং সম্প্রতি জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। ‘মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল’ প্রকল্পটি খোদ তার সহকর্মী নার্সের প্রসবকালীন অবহেলায় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।