বসুন্দরা গ্রুপ এর মঙ্গল হোক, মালিকপক্ষ দীর্ঘজীবী হোক, সৃষ্টিকর্তার কাছে এমন প্রার্থনাই করেছেন খাদ্য সহযোগিতা পাওয়া ভৈরবের দুইশত হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষজন। করোনা মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সারাদেশ ব্যাপি দরিদ্র, দিনমজুর ও অসহায় মানুষদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা এগারটায় ভৈরব শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়ামে হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপহার সরুপ প্রতিজনকে দেওয়া হয় ১০কেজি মিনিকেট চাল, ২কেজি বসুন্ধরা আটা, ১লিটার সয়াবিন তেল, ১কেজি লবণ, ১কেজি ডাল ও গুড়ো মসলার প্যাকেট এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ৪টি মাস্ক।
এসময় খাদ্য সামগ্রীর বস্তা হাতে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ৬২বছর বয়সী আজিজুল মিয়া নামের এক বৃদ্ধা। অশ্রুসিক্ত নয়ন আর ভাঙ্গা স্বরে আজিজুল জানান, একসাথে এত খাবার কখনোও কেনার সাধ্য হয়ে উঠেনি তার। করোনার ভয়াল থাবায় ভ্যান চালক আজিজুলের অভাব অনটনের সংসারে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। পরিবার-পরিজনদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনের পর দিন পার করলেও এতদিন কোনো খাদ্য সহযোগিতা পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি আজিজুলের। তাই বসুন্ধরার এই খাদ্য সহায়তা পেয়ে উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করে বসুন্ধরার মঙ্গল কামনা করেন তিনি।
উপকারভোগীদের আরেকজন হাজেরা বেগম নামে এক নারী। জরাজীর্ণ দেহে দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি শাড়ি পরনে দাড়িয়েছিলেন খাদ্য সহায়তা পাবেন এমন মানুষের সাড়িতে। চোখে-মুখে তখনো বিষাদের কালো ছায়া। কারণ লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া হাজেরার বাস চালক স্বামী এখন নিতান্তই বেকার। ফলে তার পরিবারে দেখা দেয় তিনবেলা দুমুঠো খাবারের চরম অভাব! হাজেরার এই মলিন মুখেও সজীবতার হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে আল্লাহর কাছে বসুন্ধরার মালিকপক্ষের দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন তিনি।
জাহের মিয়া। পেশায় দিন মজুর। সুস্থ পৃথিবীতে তিনি টাকার বিনিময়ে ঘাম ঝড়িয়েছেন দীর্ঘকাল। কিন্তু এখন করোনায় অসুস্থ এই পৃথিবী দিন মজুরের জাহের মিয়ার জীবনেও হতাশার মাত্রা বাড়িয়েছে। জাহের মিয়া বলেন, ‘কুরুনার কারণে মানুষ নিজেই খাইতো পা না, আমডারে টেহা দিয়া কামো নিব কেমনে। মানষের কাছে টেহা থাকলে না মানুষ আমডারে কামো নিতো! পরে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া খাদ্য সামগ্রীর বস্তা পেয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন জাহের মিয়া এবং বলেন, ‘আল্লাহ তোমরার ভালা করুক, অন্তরতে দুয়া করি’।
উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট লুবনা ফারজানা, ভৈরব পৌর মেয়র আলহাজ¦ ইফতেখার হোসেন বেনু, ভৈরব থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন,ভৈরব মুরশিদ মজিব উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো: ইকবাল হোসেন ও কাউন্সিলর মো: মোমেন সহ আরো অনেকে। এছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ফুড এ- বেভারেজ বিভাগের ম্যানেজার মোঃ মুকিতুল ইসলাম মুকিত, বসুন্ধরা সিমেন্ট সেক্টরের সিনিয়র ম্যানেজার মোঃ মনিরুল ইসলাম, বসুন্ধরা গ্রুপের ডিলার (ভৈরব) মোঃ রফিকুল ইসলাম ও কালের কণ্ঠ ভৈরব প্রতিনিধি আদিল উদ্দিন আহমেদ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে ভৈরব উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা কালের কণ্ঠকে নিজের অভিমত প্রকাশে বলেন, হতদরিদ্র মানুষজনদের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানরাও এই বিপদের সময়ে অসহায়দের পাশে দাড়াবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বসুন্ধরার এসব মানবিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।
আমন্ত্রিত অতিথিদের পৌর মেয়র আলহাজ¦ ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে দেশের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়েছে, দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এভাবে অসহায় মানুষের পাশে থাকলে অবশ্যই আমরা এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবো।
বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে আমন্ত্রিত অতিথি ভৈরব থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য” এটিই প্রমাণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ।