করোনার অবসর কাজে লাগাতে জামদানী শাড়ি তৈরীর কাজে যুক্ত হয়েছেন কিশোরগঞ্জের সুমন ও হুমায়ুন। অন্যান্য ব্যবসার মতো সফলতা হাতছানি দিচ্ছে তাদেরকে। তাদের কর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও কয়েক যুবক পেশার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। এর মাধ্যমে সফলতা পেয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তারা।
কিশোরগঞ্জ সদও উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের প্যরাভাঙ্গা গ্রামে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কথা হয় প্যারাভাঙ্গা গ্রামের আ. মন্নানের ছেলে জামদানী কারিগর সুমনের সাথে। তিনি একজন সংগ্রামী সফল উদ্যোক্তা। তার তৈরীকৃত জামদানী শাড়ি বাড়ি থেকেই নিয়ে যান ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের পাইকাররা। নিজস্ব কারিগর দ্বারা তৈরি করা শাড়িগুলোর মূল্য ৬,০০ টাকা । একটি শাড়ি তৈরী করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ। প্রতি শাড়িতে খরচ হয় ১ হাজার টাকা। প্রতি মাসে ৪টি শাড়ি তৈরী করতে পারেন।
সুমনের সহযোগী ভুরঙ্গারচরের বিল্লালের ছেলে মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি ও সুমন নরায়নগঞ্জের একটি তাতী প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ বছর কাজ করেছি। সেখানে মালিকের অধীনে কাজ করে আমরা লাভবান ছিলাম না। ফলে বাড়িতে এসে করোনার অবসর সময় না কাটিয়ে নিজেরাই উদ্যোগী হই জামদানী শাড়ি তৈরীর কাজে।
জামদানী শাড়ির উদ্যেক্তা সুমন মিয়া বলেন, আমি রুপগঞ্জের একটি জামদানী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১৮ বছর কাজ করেছি। সেখানে কাজ শিখে এখন নিজ বাড়িতেই এ কাজে মনোযোগী হই। আল্লাহর রহমতে আমাদের জামদানী শাড়ি বিক্রি করে পরিবারের ভরনপোষন করতে পারছি। বর্তমানে আমাদের সহযোগী হয়েছেন প্যারাভাঙ্গার সোহেল ও কফিল। আমরা চারজনে মিলে জামদানী শাড়ি তৈরী করে সংসার চালিয়ে যেতে পারছি।
জামদানী কারিগর সোহেল ও কফিল বলেন, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো ব্যবসা করার। কিন্তু কী করবো ভেবে পাইনি। শেষে সুমন ভাইয়ের মাধ্যমে লক্ষ্য স্থির করি। আসলে শুরু করাটাই ছিলো চ্যালেঞ্জিং। কিভাবে শুরু করবো, কী পণ্য নিয়ে কাজ করবো- লক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না। ‘অবশেষে ভাবলাম জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করবো। সে লক্ষ্যে এ কাজে নেমে গিয়ে আল্লাহর রহমতে এখন সফল। তবে আমাদেরকে সরকারী বা বেসরকারীভাবে পৃষ্টপোষকতা দিলে আরও ভালো করতে পারতাম।
জামদানি পছন্দ নয়, এমন নারী খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, সন্দেহ! যে কোনও উৎসব-পার্বণের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যায় ঐতিহ্যের জামদানি শাড়ি। এমন বাস্তবতায়ও এককালে করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়িতে মসলিন ও জামদানি পল্লি বিপন্ন হয়েছে আগেই। নারায়নগঞ্জে কর্মরত অনেক কারিগর পুঁজির অভাবে পেশা ছেড়েছেন।
প্যারাভাঙ্গার বাসিন্দা আবু হানিফ ও কামাল মিয়া বলেন, কম দামে ভারতীয় শাড়ি পাওয়া যায়। সে তুলনায় একটু বেশি দাম দিয়ে জামদানি শাড়ি কিনতে চান না গ্রাহকরা। এছাড়া এ শিল্পে নেই দক্ষ কারিগর, শাড়ি তৈরির কাঁচামালের দামও অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না তাঁতিরা। এরমধ্যে করোনায় সংকটাপন্ন এসব কারিগররা মনের সাহস নিয়ে জামদানী শাড়ি তৈরী করছেন এটা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ বাস্তবায়িত করছেন। আমরা তাদেরকে অনেক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। এসব কারিগররা সরকারী বা বেসরকারীভাবে সহায়তা অথবা প্রশিক্ষণ পেলে আরও উন্নত করতে পারবে বলে আমাদের বিশ^াস।
কিশোরগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আ.না.ম মুজিবুর রৌফ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে জামদানী শাড়ির কোনো কারিগর থাকলে আমাদের বিসিকের ওয়েব সাইটে অনলাইন নিবন্ধন করলে আমরা তাদেরকে সহায়তা করবো।