স্বপ্ন স্বপ্নই- স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর চেষ্টা দুটোই প্রয়োজন। এই দুটোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় আসে সফলতা। সফলতার পিছনে থাকে অনেক শ্রম আর মেধা। যত কষ্টই হোক বুকে থাকে সফলতার আশা। আমাদের দক্ষিণ অঞ্চল একটি কৃষিজাত এলাকা। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কৃষি উপর নির্ভরশীল। কৃষির উপর নির্ভর করে তারা প্রতি বছরেই বিভিন্ন প্রকারের ফল ফলাদি, নার্সারি এবং অন্যান্য কৃষি কাজ করে সফলতার অর্জন করে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া গ্রামের বাবুল হাওলাদার ও তার ছেলে মোঃ মিরাজ হাওলাদার ড্রাগন ফসল চাষে সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রচলিত ফসল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে চাষ করেছেন লাল রঙের ড্রাগন ফল। আমাদের এ অঞ্চলে নতুন সৃজনশীল চাষী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কিন্তু প্রথমে তারা কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইউটিউব দেখে মনে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সু-পরামর্শ নিয়ে থাকেন। বাবুল হাওলদার সৌদিতে ১৯ বছর ও মিরাজ হাওলাদার ১১ বছর সৌদিতে প্রবাসি হিসেবে থাকতেন। তারা দুইজনেই বাড়ীতে এসে এই নতুন ফল চাষ করার পরিকল্পনা করেন। তারা ড্রাগনের পাশে সৌদির খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন রকমের লেবু চারা রোপন সহ ড্রাগন ও সৌদির খেজুর গাছের নার্সারি করেছেন। প্রথমত তারা নাটোর, ঢাকা গাজীপুর, ঝিনাইদা, খুলনা থেকে ৬ শত চারা এনে জমির উপরে ড্রাগন চাষ শুাং করেন। বর্তমানে ২৫শত ড্রাগন চারার চাষ করেন। প্রতিটি চারা ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে ক্রয় করেন। ড্রাগন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে কনক্রিটের পিলার স্থাপন করতে হয়। একটি কনক্রিটের পিলারের চার পাশে ৪টি চারা লাগনো হয়। পিলারের উপর একটি টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। এই টায়ারের উপর ড্রাগনের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে। ৪ ধরনের জাতের ড্রাগন তারা চাষ করেছেন, যেমন-ভিয়াতনামিল, পিনরোজ, ব্লাক, হলুদ। একটি ড্রাগন ফল সম্পূর্ণ রুপে বের হতে প্রায় ১ থেকে দেড় বছর লাগে। কিন্তু তাদের চাষাবাদের নৈপুন্যতার কারণে ৬ মাসের ফল বের হয়েছে এবং এ থেকে ৮ কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। সাধারণত জুলাই আগস্টে ফল পাকতে শুরু করে। ফুল আসার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফল পেকে যায়। একটি পরিপুষ্ট পাকা ফলের ওজন প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম হয়। এক নাগাড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ২বিঘা জমিতে ড্রাগন ও সৌদির খেজুর এবং মিশ্র ফলাদি চাষে ফল আসা পর্যন্ত তাদের প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এই ফলের বাগানের আরেকটা দিক হলো ড্রাগন গাছ উপরে থাকায় এবং এর কোন পাতা না থাকায় নিচের অংশে অন্যান্য সবজির চাষও করা যায়, যা অত্যন্ত লাভজনক। আমাদের এই বাগান আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাবুল হাওলাদার ও তার ছেলে মিরাজ হাওলাদার জানান, তারা সৌদি আরব থেকে বাড়িতে এসে ইউটিউবে ড্রাগন, খেজুর এবং লেবু চাষাবাদ দেখে আগ্রহী হয় এবং অত্র উপজেলার কৃষিবিদদের সু-পরামর্শ নিয়ে থাকি। পরে বিভিন্ন জাতের লেবু, ড্রাগন দিয়ে চাষাবাদ শুরু করি। এ ফল চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। সাধারণত কেঁচো কমপোস্ট সার প্রয়োগ করা হয়। ওষুধ প্রয়োগ করা লাগে না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা সব সময় আমাদের এ চাষাবাদকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিচ্ছে এবং সু-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ রহমতে আমাদের এই ড্রাগন ও লেবু এবং সৌদির খেজুর চাষাবাদ করে ভাল সফলতা পাবো বলে আশাবাদি। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়। এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়রা সিদ্দিকা জানান, ইন্দুরকানীতে এই প্রথম একমাত্র ড্রাগন চাষী হিসেবে কৃষক মোঃ বাবুল হাওলাদার ও তার ছেলে মিরাজ হাওলাদারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং ড্রগন এ অঞ্চলের একটি নতুন সম্ভবনাময় ও লাভজনক ফসল। ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি বিভাগ উক্ত চাষীকে সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ ও টেকনিক্যাল সাপোর্টসহ বাগানটি নিয়মিত পরিদর্শন করে আসছেন।