নঃসন্তান হতদরিদ্র পরিবারের সম্বল ছিল ৩০টি ভেড়া। সারাদিন পশুগুলোকে সন্তানদের মতো লালন-পালন করতেন আবজাল হোসেন ও আরজিনা বেগম দম্পতি। কিন্তু বুধবার প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় থেকে দেওয়া কৃশিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর একে একে মারা গেল ১৪টি ভেড়ামারা। ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার কমলাপুর গ্রামে। প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোয় এমন হওয়ার কথা না। তারপরও তারা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবেন ঘটনাটি আসলে কী।
ক্ষতিগ্রস্থ আবজাল বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চাষের জমি নেই। মাত্র তিন শতক জমির ওপর টিনের ঝুপড়িতে থাকি। বাড়ির সাথে আরো ১০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছি ভেড়ার খামার। গত পাঁচ বছর ধরে এগুলো লালন-পালন করছি। মাত্র পাঁচটি ভেড়া দিয়ে শুরু করলেও শেষে খামারে ৩০টি ভেড়া হয়; যার দাম পাঁচ লাখ টাকার বেশি।’
আরজিনা জানান, তারা লক্ষ্য করেন, ভেড়াগুলো ঠিকমতো মলত্যাগ করছে না। বিষয়টি গত মঙ্গলবার কালীগঞ্জ প্রানি সম্পদ অফিসে গিয়ে জানানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা কৃমিনাশক ওষুধ দিয়ে বলে দেন, ‘গর্ভবতী ভেড়াকে এই ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। বুধবার সকালে তাদের কথামতো নিয়ম মেনে খামারের ১৮টি ভেড়াকে এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। এর পরপরই ভেড়াগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনই আটটি ভেড়া মারা যায়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত একে একে ১৪টি ভেড়া মারা যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরো চারটি।
এদিকে ঘটনার পর মৃত ভেড়ার নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা প্রানি সম্পদ অফিস। এ ছাড়া স্থানীয় সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু খামারটি পরিদর্শন করেছেন। চেয়ারম্যান মিঠুজানান, খবর পেয়ে তিনি বুধবার ক্ষতিগ্রস্থ খামারির বাড়িতে যান। সেখানে তিনি আটটি ভেড়ার মৃতদেহ দেখেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এএসএম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে যায় এবং অসুস্থ ভেড়ার চিকিৎসা দেয়। তারা মৃতভেড়ার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হয় সকালে। এরপর প্রানীদের বিশ্রামে রাখতে হয়। কিন্তু খামারি আফজাল হোসেন কৃমিনাশক ওষুধ খাইয়ে মাঠে ভেড়াগুলো চরাতে নিয়ে যান। মনে হচ্ছে একারণেই ভেড়াগুলো অসুস্থ হয়ে মারা যায়।’
ক্ষতিগ্রস্থ খামারিকে প্রানি সম্পদ অফিস থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।