করোনার কারণে সীমিত পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাংলাদেশে প্রথম অস্ত্র পাচারে মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরনের সেই জমজ দুই বোন মনি মুক্তার জন্ম দিন পালন করেছে।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাবার দেওয়া নতুন পোশাকে মনি মুক্তার চোখে মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। আর এই জন্মদিনের উৎসবকে ঘিরে যেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের পালপাড়া গ্রাম সেজেছে রানীর বেশে।
রোববার বিকেলে প্রচন্ড বৃষ্টি এবং করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে তাদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসে তাদের বন্ধু,আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি এবং গণমাধ্যম কর্মীরা।
বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার আকুতি নিয়ে জন্মদিন উৎসবে মনি মুক্তা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে জানান, স্কুলে যেতে পারে না বলে সব সময় মন খারাপ থাকে। স্কুল বন্ধের কারণে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। আর এ কারণে সবাইকে জন্মদিনের দাওয়াত দিতে পারে নি। এজন্য দ্রুত করোনা মুক্তির প্রার্থনা করেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। প্রার্থনা করেন নিজেদের এবং পরিবারের সুস্থ্যতা ও মঙ্গলের জন্য। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চান বলে জানিয়েছেন মনি মুক্তা।
মনি মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, সংসারে টানা পোড়েন থাকলেও মনি মুক্তার জন্মদিন পালনে উদ্যোগের কমতি থাকে না। অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে আলাদা ভাবে রেখে দেই তাদের জন্মদিন পালনের জন্য। সেই টাকা থেকে জন্মদিনে দুজনের জন্য একই রকমের জামা কিনে দেই। বাকী টাকা ব্যয় করা হয় জন্মদিনের কেক এবং অতিথি আপ্যায়নে। জন্মদিনে সন্তান এবং পরিবারের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন তিনি।
মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল আরও জানান, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।
অতঃপর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা ভিন্নসত্ত্বা লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।