করোনা মহামারির থাবায় ক্রমেই বড় হচ্ছে সরাইলের লাশের সারি। টিকা নিতে হাসপাতালে নারী পুরূষের উপচে পড়া ভীর। বাড়ছে আক্রান্ত। চারিদিকে আতঙ্ক। আর এ সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও একদল তরূন ও যুবক চালিয়ে যাচ্ছে মানবসেবা। সংখ্যায় তারা ২০ জন। বিনা মূল্যে ওঁরা রোগীর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। রক্ষা হচ্ছে রোগীর জীবন। ওরা নির্ভিক। ওরা উজ্জীবিত। এরাই ‘সরাইল অক্সিজেন ব্যাংক’ নামক সংগঠনের সদস্য। এ সংগঠনে নেই কোন পদ পদবী। ওরা সকলেই ভলান্টিয়ার। যখন ডাক আসছে তখনই ছুটে যাচ্ছেন রোগীর বাড়িতে। গভীর রাতে যানবাহন না থাকায় কাধে সিলিন্ডার নিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তারা। সাংবাদিকসহ গুরূত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হচ্ছেন এ সংগঠনের উপদেষ্টা। তাদেরকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসছেন দানশীল ব্যক্তি, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকাস্থ সরাইল থানা সমিতি। তারা দিয়েছেন ১৪ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। এ উপলক্ষে গত বৃস্পতিবার সরাইল সদরে বড্ডাপাড়া এলাকায় বসে এক আলোচনা সভা। ভলান্টিয়ার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন মিল্লাদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ভলান্টিয়ার ও হৃদয়ে সরাইল সংগঠনের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ মৃধা দুলাল। অতিথি ছিলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. আনিছুর রহমান, সরাইল থানা সমিতির সম্পাদক প্রকৌশলী মো.শাহাজাহান, কার্যকরী সভাপতি মো. নুরূ মিয়া, সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউসার, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. আরজু, সরাইল মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান, বাবুল হোসেন তাপস প্রমূহ। দাওয়াত পেয়েও এ অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ না আসার বিষয়টি জানিয়েছেন সংগঠনের ভলান্টিয়াররা। বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে মানবসেবার চেয়ে বড় কাজ নেই। সবাই এটি করতে পারে না। কারণ মানবসেবা করতে সাহস, ত্যাগ, পরিশ্রম ও দৃঢ়মনোবল প্রয়োজন। এ কাজের ফসল দুনিয়া ও আখেরাতে পাওয়া যায়। সরাইল অক্সিজেন ব্যাংক-এর উদ্যোক্তা ভলান্টিয়ার ও উপদেষ্টাদের অভিনন্দন। কারণ তারা সম্মিলিত ভাবে একটি ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। মহৎ কাজটি দেখে অন্যান্য সংগঠন বা ব্যক্তিবর্গও উদ্ভুদ্ধ হতে পারে। আক্রান্তের ভয়কে পেছনে ফেলে তারা ছুটছেন রোগীর কাছে। চাপ কমবে স্বাস্থ্য বিভাগের উপরও। সমাজের বিত্তবানদের এ কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকা উচিত। পরে ঢাকাস্থ সরাইল থানা সমিতি পক্ষ থেকে তাদের হাতে তুলে দেন ১৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। এখন তাদের সিলিন্ডারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ এ। প্রসঙ্গত: করোনায় অক্সিজেনের অভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃত্যুর সংবাদ ভাবিয়ে তুলে এই যুবকদের। একে অপরের সাথে পরামর্শ করে গত আগস্ট মাসে গ্রহন করেন সাহসী পদক্ষেপ। ‘নি:শ্বাস নিবে সরাইল’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে অক্সিজেনের অভাবে সরাইলে করোনা রোগী মৃত্যু রোধকল্পে তারা গঠন করেন ‘সরাইল অক্সিজেন ব্যাংক’ নামের সংগঠন। প্রথমে উদ্যোক্তারা স্বল্প সংখ্যক সিলিন্ডার দিয়ে যাত্রা শুরূ করেন। বিষয়টি প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যাপক সারা মিলে। এগিয়ে আসেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান আ.লীগ নেতা সৈয়দ তানবির হোসেন কাউসার, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (চক্ষু) ডা: ফখরূল ইসলাম শিবলী, ইটালী প্রবাসী সৈয়দ ইলিয়াছ আরাফাত সজিব, সোহেল মিয়া ও রূবেল। গত ১২ দিনে তারা ৯ জন করোনা রোগীর বাড়িতে বিনামূল্যে ১৫টি সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা সরাইলে অক্সিজেনের জন্য ভরসার জায়গা হিসেবে চিহিৃত হয়েছেন। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা হলেন-বেলায়েত হোসেন মিল্লাত, ফয়সাল আহমেদ মৃধা, সদস্য কামাল উদ্দিন সজল, মো. জহিরূল ইসলাম রিপন, পারভেজ আলম, কাজী আবিদুল্লাহ, শরীফ বক্স ও বেলাল হোসেন।