দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে প্রয়োজনে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে হলেও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন বরিশালে আনসার সদস্যদের গুলিতে চোখ হারানো ইউপি সদস্যসহ তিন আওয়ামী লীগ নেতার পরিবার। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান, গত ১৮ আগষ্ট রাতের ঘটনায় প্রথম অবস্থায় আনসার সদস্যদের গুলিতে কমপক্ষে ৬০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এরমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনির ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের চোখে গুলি লাগে। পরবর্তীতে মেয়রের ওপর গুলি করা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে কাশিপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান রায়হান ঘটনাস্থলে ছুঁটে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারিয়েছেন।
আহত রায়হানের বরাত দিয়ে তার বাবা আমির হোসেন বলেন, ঘটনার দিন রায়হান খবর পায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের ওপর গুলি করা হয়ছে। এ খবর শুনে তাৎক্ষনিক রায়হান সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই ইউএনও’র বাসা থেকে গুলি করা হলে রায়হান গুলিবিদ্ধ হয়।
রায়হানের মা নুরজাহান বেগম বলেন, দল করতে গিয়ে এভাবে একটা ছেলে অন্ধ হয়ে যাবে, তাতো হতে পারেনা। আমার একটাই দাবি, আমার ছেলের যেন ভালো হয় সে ব্যবস্থা যেন করা হয়।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনিরুল ইসলাম মনিরের স্বজন জহিরুল ইসলাম জানান, ১৮ আগষ্ট রাতে মনির খবর পান ইউএনও অফিসের সামনে মেয়রকে গুলি করা হয়েছে। খবর পেয়ে মনির সেখানে ছুঁটে যান। ইউএনও অফিসও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। গিয়ে সেখানে দাঁড়াতেই ইউএনও’র বাসা থেকে গুলি বর্ষিত হয়। এতে মনিরের মুখমন্ডলসহ শরীর মিলিয়ে ৪২টি গুলি লাগে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন গুলিতে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রয়াত বীর প্রতীক রফিকুল আহসান বাদশার স্ত্রী মোহসিনা পারভীন বলেন, আমার ছেলে তানভীরের চোখে পাঁচটি গুলি লেগেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তানভীর আর কোনোদিন চোখে দেখতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আমার সন্তান যাদের গুলিতে চোখ হারিয়েছে তাদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, অকারণে গুলিবর্ষণকারীদের বিচার আপনি করুন। আপনি আমার সন্তানের সু-চিকৎসার ব্যবস্থা করুন।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, ঢাকায় যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের ব্যাপারে আমরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ আগষ্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পুরনোদিনের শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণ করতে যায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। এতে বাঁধা প্রদান করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমান। এনিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসায় প্রবেশ করেন। তাদের প্রতিহত করতে ইউএনও’র দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা নির্বিচারে গুলিবর্ষন করেন।
ঘটনার আগেই বদলি হয়েছেন ইউএনও-ওসি ॥ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। এদেরমধ্যে মুনিবুর রহমানকে ১০ আগষ্ট এবং নুরুল ইসলামকে ১৮ আগষ্ট বদলি করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে বদলি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখার উপ-সচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এই আদেশে স্বাক্ষর করেন। মুনিবুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ছাড়পত্র প্রদান করা হলেই বরিশাল ত্যাগ করবো।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ আগষ্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি শাহাজাদা মোঃ আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আমাকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ১৮ আগষ্ট দিবাগত রাতে সদর উপজেলা পরিষদে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার আগেই তারা দু’জন বদলীর আদেশ পেয়েছেন।