দেখতে কালো খয়েরি। লম্বায় হয় সাধারণত ১৫ থেকে ১৬ ফুট। দেশীয় আখের মতো হলেও রয়েছে বেশ ভিন্নতা। এ আখের কান্ড নরম, রস বেশি, মিষ্টি বেশি, চাষের পর লাভ বেশি হয়ে থাকে। এসব কথা ভেবেই অনেক চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের গ্যান্ডারি আখ চাষ করেছেন কাগমারি গ্রামের হারুনুর রশিদ। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন। অবশেষে ঝুঁকেছেন ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করতে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ জাতের আখ চাষ করে মোটা অংকের টাকা লাভ করা সম্ভব।
ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেছেন নিজের জমিতে। পরীক্ষামূলক চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন, আগামী বছর বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করবেন বলে জানান। প্রায় এক বছর আগে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি আফিসার আলহাজ জুবায়ের হোসেনের মাধ্যমে তিনি আখের চারা সংগ্রহ করেন। চাষের পর এখন তার ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে ফিলিপাইনের কালো আখ। এলাকার কৃষক ও উৎসুক মানুষ প্রতিদিন দেখতে ভীড় করছে।
সরেজমিনে আখ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ফিলিপাইনের কালো জাতের এ আখ প্রায় সাত থেকে আট ফুট লম্বা হয়েছে। আখগুলো সাধারণ ভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও রয়েছে ভিন্নতা। এ আখ পরিপক্ক হতে ১০-১১ মাস সময় লাগে। গোড়া থেকে পুরো কান্ডই মোটা ও নরম। আঙ্গুলের একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস যেমন রয়েছে, তেমনি মিষ্টিও বেশি রয়েছে। তিনি জৈবসার দিয়ে আখ চাষ করেছেন। লালচে বা কালো খয়েরি বা কালো রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের চাষীরা দেখতে ভিড় করছেন প্রতিদিন।
প্রথমদিকে তিনি ধারনা করছিলেন,এ আখ চাষে তিনি সফলতা পাবেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে অন্য জাতের আখ চাষ বেশি হয়। দেশীয় জাতের সেই আখের ভালো ফলন পেয়ে থাকে এলাকার কৃষকরা। এদিকে মোবারকগঞ্জ ও দর্শনা দুটি চিনি কল রয়েছে। কৃষকরা চিনিকল থেকে যে জাতের আখের বীজ দিয়ে থাকে সে জাতের বীজের আখ রোপন করে থাকে। কিন্তু হারুনুর রশিদের এই ফিলিপাইনের কালো জাতের গ্যান্ডারি আখ ভিন্ন জাতের। এ জাতের আখ ঝিনাইদহ জেলায় এই প্রথম চাষ হচ্ছে কাগমারি এলাকায়।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া গেলেও আখটি দেশে সারা বছরই চাষ করা যায়। প্রায় ১০ থেকে ১১ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে। তিনি প্রায় ৫ মাস আগে এ আখ রোপন করেছেন, বুঝতে না পারার কারণে এবছর একটু দেরি করে রোপন করতে হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবার নতুন করে এ জাতের আখ রোপন করবেন। আগামী ২ মাস পর আখের গ্রোথ বৃদ্ধি পাবে ও খাওয়া যাবে এবং প্রতিটি আখ পাইকারি দরে ১০০ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। এ আখ চাষ করতে জৈব সার ও পটাশ মিশ্রিত করে বেশি প্রয়োগ করতে হয়, ফলে রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রায় ৩ বার জৈব সার ক্ষেতে প্রয়োগ করতে হয়, তাতে করে আখ মিষ্টি বেশি হয়। রাসায়নিক সার দিলে নাকি এ আখ মিষ্টিকম হয়। আবার আখ খাবার সময় মুখ দিয়ে ছুবলা পরিস্কার করা লাগে না। আখ এতই নরম যে, হাত দিয়ে ছুবলা তুলে খাওয়া সম্ভব। গরু,ছাগল ও শিয়ালে খাবে এ কারণে তিনি তারের বেড়া দিয়ে ক্ষেতটি ঘিরে রেখেছেন। এলাকার অনেক কৃষক ফিলিপাইনের কালো জাতের গ্যান্ডারি আখ রোপন করার জন্য হারুনুর রশিদের কাছ থেকে চারা সংগ্রহের পরামর্শ নিচ্ছেন। বিদেশী কালো আখ ঝিনাইদহ জেলায় আর কেউ চাষ করেনি এই প্রথম তিনি চাষ করেছেন।