খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে অবস্থিত জুট টেক্সটাইল মিলটি। যা বর্তমানে ম-ল জুট টেক্সটাইল মিল নামে পরিচিত। মিলটির যাত্রা শুরু থেকে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলে আসছে। সরকারের দেওয়া নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেও শ্রমিক স্বার্থ ভূলন্ঠিত এ মিলটিতে। যেন দেখার কেউ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, দেয়াড়া ম-ল জুট টেক্সটাইল মিলটির বিভিন্ন স্তরে শুরু থেকে কারখানা শ্রমিক আইনের কোন বালাই নেই। শ্রমিকদের কাজের কোন স্থায়ীত্ব নেই। নিয়ম নীতির কথা বলতে গেলে তার এ মিলে আর কাজ থাকবে না। মিল মালিক পক্ষ এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোককে মোটা অংকের স্বার্থ দিয়ে শ্রমিক নির্যাতন,দমন,পীড়ন অব্যহত রেখেছে বলে জানা যায়। শিশু ও নারী শ্রমিক বেশী। গাড়ি দিয়ে গ্রাম থেকে শ্রমিক এনে মিল চালানো হয়। নামে মাত্র টোকেন দিয়ে শ্রমিক খাটানো হয়। কম মজুরী নিয়ে কথা বললে মিল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। অনেককে বহিষ্কারও করার অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের রাখা হয় আতংকের মধ্যে। মিলের কর্মরত পাট যাচাই শ্রমিকদের দৌলতপুর জুট বেলিং অঞ্চলের এগ্রিমেন্টের তোয়াক্কা না করে মিল মালিকের মন গড়া রেটে মজুরী দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি বিভাগে সরদার ও মালিকের চামচাদের মাধ্যমে চলে গোপন চাঁদাবাজী। মিল গেট সর্বদা শ্রমিক বিদায়ী কান্নার রোলে উদ্ভাসিত থাকে। মিলে কর্মরত শ্রমিকদের ছোট ছেলে মেয়েদের দিয়ে তালিকার বাইরে রেখে কাজ করানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান সময়ে একজন অদক্ষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরী যখন ৬০০ টাকার উর্ধ্বে তখন এ মিল কর্তৃপক্ষ কর্মরত শ্রমিককে প্রতিদিন মজুরী প্রদান করে ১৭৫ টাকা। কাজ নেই মজুরী নেই এমনি নিয়মে মিল কর্তৃপক্ষ মিল চালান। শ্রমিকদের ৮ ঘন্টার বেশী সময় কাজ করানো ও অতিরিক্ত কাজের মজুরী দ্বিগুণ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয়না। মিলে পুরা সপ্তাহ কোন শ্রমিককে কাজ দেওয়া হয়না। শিশু শ্রমের কারণে নানা দূর্ঘটনা ঘটলেও বাইরে জানাতে দেয়না মিল কর্তৃপক্ষ। বন্ধের মজুরী দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয় না। প্রতি পদে পদে এ মিলটিতে শ্রমনীতি ও শ্রমিক শ্রেণির অধিকার খর্ব করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে বলে জানা যায়।
অপর এক সূত্র থেকে জানা যায়, মিল মালিক মিল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে আগ্রাসন মনভাব দেখিয়ে আসছেন। মিলটির পুব পাশে সরকারি খাল। খালের পাড় দিয়ে ছিল লোকজনের নদীতে যাওয়ার সরকারি রাস্তা। সম্পূর্ণ রাস্তাটি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে মিল মালিক। এরাস্তা নিয়ে এলাকাবাসী আন্দোলন ও খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করলেও মিল মালিক নানা কৌশলে জনদাবীকে বিলিন করে দেয়।সরকারি খালটিও প্রায় দখলে। যে খালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেট রয়েছে। যে খালের উপর নির্ভর করে আছে দিঘলিয়ার হাজারো মানুষের কৃষিকাজ ও মাছের ঘের। অপরদিকে মিলটি ভৈরব নদী তীরে অবস্থিত বিধায় নদীতে ভাঙ্গা ইট ফেলে নদীর অনেকাংশ দখলে নিয়েছে। মিলের সামনে লাইন দিয়ে মালবাহী পরিবহনগুলো জন চলাচলের সরকারী রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে যত্রতত্র রাখা হয়। ক্যাপাসিটির উর্ধ্বে মালামাল বোঝাই করে মিলের পরিবহনগুলো যাতায়াত করে, যাদের অধিকাংশের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে না। অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব।
এসকল অভিযোগের ব্যাপারে মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অন্যান্য মিলের সাথে তুলনা দিয়ে বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল মিল যে নিয়মে চালায় আমরা তার ব্যতিক্রম করতে পারিনা। শ্রমিকদের সপ্তাহে ৬ দিনের পরিবর্তে ৩দিন, ৪দিন, ৫দিন কাজ করানো হয় এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে জানান, আমরা শ্রমিকদের পুরা সপ্তাহ কাজ করলে হাজিরা বোনাস দেয়ার নিয়ম থাকলেও সপ্তাহে ৩/৪দিন কাজ করলেও আনুপাতিক হারে বোনাস দিয়ে থাকি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে কাঁচা পাটের বাজার কমিয়ে পাট কিনে চড়া মূল্যে বিক্রি করে মিল বন্দ করে শ্রমিকদের কর্মহীন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন কিছু সমস্যা থাকতে পারে। ১০০ ভাগ সঠিক রেখে কেউ মিল চালাতে পারেনা বলেও তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। তবে এমিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ঠকানো, শ্রম নীতিমালা লঙ্ঘনসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে নেতিবাচক অভিমত ব্যক্ত করলেও শ্রমিক ও এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা।