জমির খারিজ, ৬টি গরু নিয়ে গরুর খামার থাকা ও ব্যাংকের সকল শর্ত পূরন করা সত্বেও নালিতাবাড়ীর কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক বছর ধরে কৃষককে ঘুরিয়েও ঋণ মঞ্জুর করেনি। অবশেষে কৃষক নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট ব্যাংক ঋনের বিষয়টি খুলে বললে কৃষি ব্যাংক শাখায় কৃষক কেন এত হয়রানী হল এর কারণ জানতে পরিদর্শনে যান উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু। কৃষক হয়রানীর এমন ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
কৃষক, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার রুপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের গাছগড়া গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক (৪৫) তার বাড়ীতে গত বছর জানুয়ারি মাসে ২টি ষাড় ও ২টি গাভী নিয়ে ছোট একটি গরুর খামার তৈরি করেন। খামারটি দেখ ভাল করার জন্য ৩জন লোক প্রতিনিয়ত কুড়া, খুদি, ভুষি, বাহির হতে ঘাষ কেটে আনা প্রতিদিন গরুর খাবার দেওয়াসহ মাসে ৭ হাজার টাকা খরচ করে চলেছেন। এছাড়াও ওষধ তো রয়েছেই। সংসার চালিয়ে ব্যয় বহুল এই খরচ যোগান দিতে কৃষক আবু সিদ্দিক হিমশিম খাচ্ছিলেন। গরুর খামার পরিচালনার জন্য কৃষক আবু সিদ্দিক গত বছর মে মাসে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবুর একটি ৪% হারের সুপারিশ নিয়ে কৃষি ব্যাংক শাখার (এজিএম) মশিউর রহমানের নিকট ঋনের জন্য যান। এজিএম মশিউর রহমান কৃষক আবু সিদ্দিক কে জমির খারিজ লাগবে জানিয়ে দেন। এই খারিজ যোগাড় করতে গিয়ে কৃষকের ৬মাস লেগে যায়। এবছর এপ্রিল মাসে কৃষক আবু সিদ্দিক সাড়ে ১৪ শতাংশ জমির খারিজপত্রাদী নিয়ে এজিএম মশিউর রহমানের নিকট যান। তখন এজিএম মশিউর রহমান ৪% হারের এ ঋনের মেয়াদ শেষ আরো নানান কথা বলে পরবর্তীতে অর্থ্যাৎ এ বছরের জুন মাসে আসতে বলেন। জুন মাসে কৃষক আবার ব্যাংকে যায়। তখন এজিএম মশিউর রহমান আবার বলে জুলাই মাসে আসেন। জুলাই মাসে কৃষকের হাতে খারিজ থাকার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরো কাগজপত্র লাগবে শর্ত জুড়ে দেন। আরো কাগজপত্র যোগাড় করে আবার ব্যাংকে যান কৃষক। পরে কৃষকের জমি কম কারণ দেখিয়ে এজিএম মশিউর রহমান কৃষক আবু সিদ্দিককে এই ঋণ দেওয়া যাবে না জানিয়ে দেয়। এইভাবে বছর পেরিয়ে গেলেও কৃষক আবু সিদ্দিকের ভাগ্যে এই ঋণ আর জুটেনি। দিনের দিনের পর দিন তাদের পিছরে ঘুরতে ঘুরতে কৃষক আবু সিদ্দিক হয়রানী হয়ে সর্বশান্ত। পরে কৃষক আবু সিদ্দিক উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট ব্যাংক ঋনের বিষয়টি খুলে বললেন। রোববার ২৯ আগস্ট দুপুর ১টায় সাংবাদিক, গন্যমান্য ব্যাক্তি ও কৃষকদের সাথে নিয়ে ব্যাংক পরিদর্শনে যান উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু। এ সময় ব্যাংকের সকল শর্ত পূরন করেও কৃষককে কেন এত হয়রানী হতে হল এবং এমন অনাকাংখিত ঘটনা কেন ঘটলো কাগজপত্র দেখানোসহ এর কারণ জানতে চান ব্যাংক শাখার (এজিএম) মশিউর রহমান ও ব্যাংক শাখার উর্দ্বতন কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিনের নিকট। এ সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সঠিক কাগজপত্র হাজির করতে পারেনি।
এব্যাপারে কৃষক আবু সিদ্দিক বলেন, আমি একজন কৃষক মানুষ। আমি নিজের ও অন্যের জমি চাষ ও এখন ৬টি গরু লালন পালন করে পরিশ্রম করে জীবন সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু কারো কাছে হাত পাতি নাই। আমি এক বছর ধরে ৪% হারের ঋণ দিবে মর্মে ব্যাংকের সকল শর্ত পূরন করার পরও নালিতাবাড়ী কৃষি ব্যাংক শাখার (এজিএম) মশিউর রহমান ও ব্যাংক শাখার উর্দ্বতন কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন তারা আমার ঋণ মঞ্জুর করেনি। তারা আবার আমকে ৮% হারে ঋনের কথা বলে আবার তারা আমাকে ঋনের জন্য ঘুরাতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে তারা আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঋণ যদি তারা আমাকে দিতে না চায় তাহলে তারা আমাকে না করে দিত। আমি চলে যেতাম। কিন্তু ঋণ দেওয়ার নামে বছরব্যাপী তাদের পিছরে ঘুরিয়ে হাজার টাকা খরচ করিয়ে যে হয়রানীর শিকার হলাম আমি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নিকট এর সুষ্ঠ বিচার ও তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।
নালিতাবাড়ী ব্যাংক শাখার উর্দ্বতন কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমি আবু সিদ্দিকের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। তার গরুর খামার রয়েছে। জমি আছে। কাগজপত্রও আছে। সময় পার হওয়ার তাকে ৪% হারে ঋণ দেওয়া যাবে না। ৮% হারে দেওয়া যাবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি ব্যাংক শাখার (এজিএম) মশিউর রহমান বলেন, আমি তাকে গত বছর জমির কাগজপত্র খারিজ আনতে বলেছি। সে খারিজ আনতে দেরি করেছে। এখন দেওয়া যাবে না।
নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। কৃষক শ্রমিক জনগনের সমস্যা সমাধানের জন্যই তো আমি। আমি ব্যাংককে ৪% হারে ঋণ দেওয়ার জন্য বললাম। ব্যাংকের নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি ব্যাংক শাখার (এজিএম) মশিউর রহমান ও ব্যাংক শাখার উর্দ্বতন কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন কৃষককে এখন বলছেন ৮% হারে ঋণ দিতে এছাড়াও ঋনও নাকি এখন দেওয়া যাবে না। তাহলে কৃষক এখন এত সমস্যা নিয়ে ৮% হারে ঋণ নিয়ে কি করবে ? এই ঋনের ঋনের বোঝা সে কিভাবে বইবে ? কৃষককে এত হয়রানী করার সাহস তারা কোথা থেকে পায় ? এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আছে।