দেশে কর্মরত বেসরকারি কুরিয়ার সেবার চেয়ে সরকারি ডাক মাশুল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি। ফলে সেবাগ্রহিতারা সরকারি ডাক বিভাগের বদলে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডাক সেবা মাশুল কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য দেশের অভ্যন্তরে ডাক অধিদপ্তরের ৩০টি সেবার মাশুল পুননির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল কমানোর প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে। অর্থ বিভাগ ওই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে। তবে আন্তর্জাতিক সেবায় যে ডাক মাশুল নির্ধারিত রয়েছে তা অপরিবর্তিতই থাকছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বিভিন্ন সেবার মাশুল বাড়ায়। বর্তমানে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত চিঠি পাঠাতে ১৫ টাকা মাশুল দিতে হয়। ওই মাশুল ৬৬ শতাংশ কমিয়ে ৫ টাকা করা হবে। আর শহরাঞ্চলের মধ্যে ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য ‘সিটি পোস্ট’ নামের একটি নতুন সেবা চালু করা হবে। ওই সেবার মাধ্যমে জনগণ ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ডকুমেন্ট একই শহরের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মাত্র ৭ টাকায় পাঠাতে পারবে। তাছাড়া এক কেজি পরিমাণ ডকুমেন্ট পাঠাতে বর্তমানে খরচ হয় ৫০ টাকা, আগামীতে তা ১৫ টাকা করা হবে।
ছাড়া সারা দেশে ২০ কেজি পর্যন্ত পার্সেল পাঠানোর জন্য প্রথম কেজির জন্য বর্তমানে ৫০ টাকা খরচ করতে হয়, আগামীতে তা কমিয়ে ১৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া ডাক বিভাগের ডিজিটাল কমার্স পার্সেল নামে একটি সেবা চালু রয়েছে। ওই সেবার মাধ্যমে এক কেজি পর্যন্ত পণ্য পাঠাতে বর্তমানে ২৩ টাকা খরচ হয়। সেটির খরচ কমিয়ে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া বুক প্যাকেট নামের একটি সেবার মাধ্যমে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ডকুমেন্ট ১ টাকা খরচে পাঠানো যায়। তবে সেক্ষেত্রে খরচ অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ডাক বিভাগে রেজিস্ট্রেশন চার্জ ৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জিইপি চার্জ ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ টাকা করা হচ্ছে। তবে এডি চার্জ ৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ডাক বিভাগ অ্যাড মেইল নামে একটি নতুন সেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতি ১টি পর্যন্ত অ্যাড্রেসড মেইলে ৫০ টাকা ও ১০০টি আনঅ্যাড্রেসড মেইলের ক্ষেত্রে ২০ টাকা মাশুল বাসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পোস্টকার্ড প্রতিটির দাম ৪ থেকে কমিয়ে ২ টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে অন্ধ ডাকমাশুল নামে একটি সেবা চালু রয়েছে। তার মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য মুদ্রিত প্যাকেট বা সামগ্রী (ব্রেইল পদ্ধতিতে মুদ্রিত যে কোনো কাগজপত্র, সাময়িকী ও পুস্তক) ৮ কেজি পর্যন্ত কোনো চার্জ ছাড়াই পাঠানো যায়। ওই মাশুল অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া আমন্ত্রণপত্র একই শহরে ইস্যু ও বিলি ৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাশুল ৬ থেকে কমিয়ে ৫ টাকা ও অন্য শহরে বিলির ক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাশুল ৭ টাকা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পণ্যমূল্য প্রতি ১ হাজার টাকায় ইন্স্যুরেন্স ফি ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্টিফিকেট অব পোস্টিং প্রতি ৩টি আর্টিকেল বা তার কম হলে ৩ টাকা থেকে কমিয়ে ২ টাকা এবং বুক অব ৫০ ফরমস অব সার্টিফিকেট অব পোস্টিং ১০ থেকে কমিয়ে ৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ভিপিপি ও ভিপিএল অনুসন্ধান ফি ২ টাকা অপরিবর্তিত, কোনো আর্টিকেল বুকিং হওয়ার পর উত্তোলন ফি ৫ থেকে কমিয়ে ২ টাকা ও পোস্টাল আর্টিকেলের ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন ফি ৫ থেকে কমিয়ে ২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। রিটেনশন ফি (পোস্টাল আর্টিকেল সাতদিনের বেশি রিটেনশনের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জন্য) ২ টাকা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পোস্টাল আইডেনটিটি কার্ড প্রতিটির জন্য ৫০ থেকে কমিয়ে ২০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি পোস্ট বক্স এক বছরের জন্য ভাড়া ৩০০ থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা এবং ৬ মাসের জন্য ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিটি পোস্ট বক্স এক বছরের জন্য ভাড়া ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা এবং ৬ মাসের জন্য ১০০ কমিয়ে ৫০ টাকা করা হচ্ছে। মানি অর্ডারের ক্ষেত্রে প্রথম ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন ৫ টাকা অপরিবর্তিত এবং পরবর্তী প্রতি ১০০ টাকা বা তার অংশবিশেষের জন্য কমিশন ২ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ অপরিবর্তিত থকালেও পরবর্তী ১০০ টাকার জন্য কমিশন ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমছে। সাধারণ মানি অর্ডারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ হাজার টাকা অপরিবর্তিত থাকলেও প্রতিরক্ষা কর্মচারীদের জন্য প্রতিবার মানি অর্ডারের সর্বোচ্চ সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু সেবার মাশুল বিভিন্ন হারে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন জানান, বর্তমানে ডাক অধিদপ্তরের যে অভ্যন্তরীণ মাশুল রয়েছে তা কুরিয়ার সার্ভিসের ফি’র চেয়ে বেশি। কুরিয়ার সার্ভিসের ফির সঙ্গে ডাক বিভাগের মাশুল হার যৌক্তিক করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত মাশুল হার যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে জনগণের উপকার হবে। সেজন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সেবায় যে ডাক মাশুল নির্ধারিত রয়েছে তা অপরিবর্তিতই থাকছে।