পড়ালেখা তেমন নেই। গুছালো কথাবার্তা। স্পষ্ট উচ্ছারণ। মুঠোফোনে মূহুর্তের মধ্যে কন্ঠ বদলাতে পটু। নিজেকে কখনো সচিব। কখনো যুগ্ম সচিব। আবার বড় সাংবাদিক। অনেক ক্ষমতা ও প্রভাবশালী। এমন সব পরিচয় ও বিশেষণ উপস্থাপন করে সকল শ্রেণির মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। পুলিশের বড় কর্তাদের বিরূদ্ধে মুঠোফোনে ঘুষ গ্রহনের বানোয়াট অভিযোগ করছে। যখন তখন দিচ্ছে বদলির হুমকি। তার নাম হাবিবুর রহমান (৩৫)। হাবিব নামেই পরিচিত। নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় এলাকার আবদুল আহাদ ভূঁইয়ার ছেলে। সরাইল, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ সমগ্র বাংলাদেশেই প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে হাবিব। তার বিরূদ্ধে রয়েছে হেফাজতের তান্ডবে সহায়তা করার অভিযোগ। এক দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল প্রতিবেদনসহ তাকে আদালতে প্রেরণ করেছেন সরাইল থানা পুলিশ। গুরূত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ। হাবিবের বিরূদ্ধে দেশের মাত্র চারটি থানায় ১২টি জিডি ও ৫টি মামলার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। আরো অনুসন্ধান চলছে।
পুলিশ, মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, হাবিবরা ৪ ভাই ২ বোন। হাবিব সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় পত্রিকার হকারী করত হাবিব। কামাই রূজি কম থাকায় অনৈতিক পন্থায় পা দেয়। সেখান থেকেই শুরূ হয় তার প্রতারণা। পত্রিকা বিক্রি করতে করতে একসময় নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে থাকে। লিখতে না পারলেও পত্রিকার নিয়োগপত্র না থাকা হাবিব একসময় কথিত সাংবাদিকের তকমা লাগায়। টাকার ধান্দায় নানান ফন্দিফিকিরে নেমে পড়ে হাবিব। হুমকি ধমকি দিয়ে ছোট খাট ইনকামে চলছে না। বেঁচে নেয় প্রতারণার অভিনব কৌশল। টার্গেট করে পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের। নিজে সেজে বসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুগ্ম সচিব। প্রয়োজনে পরিচয় দেয় বড় সাংবাদিকের। হাবিবের ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ চলে আসে গ্রামে। না বুঝে ভয়ে ওই ফাঁদে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেক অসহায় মানুষ। নাসিরনগর এলাকার সাধারণ মানুষের চেয়ে হাবিবের প্রতারণায় বেশী যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে। মুঠোফোনে থানার একাধিক কর্মকর্তার কাছে নিজেকে সচিব পরিচয় দিয়ে তদবিরের অভিযোগও রয়েছে। হাবিবের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল সেখানকার পুলিশ। হেফাজতের মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে কামাই করেছে টাকা। সরাইল থানায় রিমান্ডে থাকা হাবিব পুলিশকে জানিয়েছে অরূয়াইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে মানহানি ঘটানোর লক্ষে সরাইল থানা পুলিশকে গত ৪ আগস্ট গভীর রাতে ফোন দিয়েছিল। সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ও যুবলীগের সভাপতি মো. বোরহান মিয়ার প্ররোচনায় মাত্র ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এ কাজটি করার কথা স্বীকার করেছে হাবিব। ভুয়া সচিবের ফোনে সেই রাতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। রাতেই এক মহিলাসহ চার শ্রমিককে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছিলেন। ৫ আগস্ট ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের বিরূদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করে ধরা পড়ে যায় হাবিব। এরপর থেকেই পুলিশ হাবিবকে খুঁজছিল। ১০ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেন হাবিবকে। অরূয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় শোন এরেষ্টে হয় হাবিব। এস আই মিজানুর রহমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১লা সেপ্টেম্বর বিকেলে হাবিবকে সরাইল থানায় নিয়ে আসেন। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার সকালে হাবিবকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিমান্ডে খুবই গুরূত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে হাবিব। এস আই মো. মিজানুর রহমান বলেন, হাবিব আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমি (হাবিব) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পুলিশ ইউনিট-২ থেকে বলছি। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন বলেন, হাবিবের প্রতারণার জাল সারা দেশেই বিস্তৃত। সামান্য লাভে আমাকে ফোন দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো: বশিরূল আলম স্যারের পরিচয় দিয়েছে। আমি প্রথমে স্যার মনে করেই সম্মানের সাথে কথা বলেছি। ৪জনকে আটকও করেছি। সে আমাকে বদলি করার হুমকিও দিয়েছে। তার নম্বরের সাথে মুঠোফোন স্ক্রীনে বড় কর্তার নামও ওঠে। পরে নিশ্চিত হয়েছি সব ভুয়া। এমন পরিচয় দিয়ে পুলিশের সাথে প্রতারণা করা হাবিবের পেশা। একসময় হাবিব নারায়ণগঞ্জ এলাকার থানার ওসি সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও প্রতারণা করেছে। তার বিরূদ্ধে সেখানে ১২টিরও অধিক জিডি রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় ১টি, সরাইলে ১টি ও আশুগঞ্জে ৩ টি প্রতারণার মামলা রয়েছে।