জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশে গ্যাস সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানীকৃত এলএনজি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তা ৬৫০-৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে দেশের শিল্প-কলকারখানা থেকে শুরু করে আবাসিকেও গ্যাস সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাসের চাপস্বল্পতায় দেশের শিল্প খাত চলতি বছরের এপ্রিল থেকেই বড় সংকটে রয়েছে। বিশেষ করে শিল্প এলাকায় নির্ধারিত চাপের কম গ্যাস সরবরাহ হওয়ায় শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েছে পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র খাতের সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। টেক্সটাইল মিলগুলোর গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআইয়ের পরিবর্তে ৩-৫-এ নেমে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নিজস্ব খরচে অবকাঠামো নির্মাণপূর্বক গ্যাস দিয়ে অত্যাধুনিক জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে মিল পরিচালনা করছে। ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের জন্য গ্যাসই হচ্ছে মুখ্য জ্বালানি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মিল-কারখানাগুলো খোলা রাখাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে বিগত ২০১৮-২০ সাল পর্যন্ত তিতাস থেকে ৫ হাজারেরও বেশি নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। যা গ্যাসের চাহিদায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ তিতাস চাহিদামাফিক সরবরাহ পাচ্ছে না। আর যে পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে তাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এমন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যদিও তিতাসের গ্যাসের চাপ বাড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়েলহেড কমপ্রেশার বসানো হয়। কিন্তু কূপ থেকে গ্যাস পাওয়া না গেলে ওয়েলহেড কমপ্রেশার বসিয়ে লাভ হচ্ছে না। গ্যাসের প্রেশার কম পাওয়া নিয়ে ইতিপূর্বে জিটিসিএলকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে তিতাস। তারপরও গ্যাসের সরবরাহ সঙ্কট কাটেনি।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাসের মজুদ আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১১ বছর চলতে পারে। গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে গেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কোনো ধরনের ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিকল্পনাই নেই। তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সংকট নিরসনে আশাবাদ জানালেও তেমন কোনো পরিকল্পনা এখনো দৃশ্যমান নয়। দেশের স্থলভাগ কিংবা সমুদ্রসীমায় গত ৫ বছরে নতুন করে কোনো গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে দেশের গ্যাসের সরবরাহ সংকট কাটাতে গত দু’মাসে অন্তত ৩টি চুক্তি করেছে সরকার। মূলত বিদ্যমান গ্যাস সংকট সামাল দিতেই তা করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বর্তমান সঙ্কট নিয়ে আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। আরএলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ার বিষয়টি পেট্রোবাংলাও স্বীকার করেছে। সংস্থাটির দৈনিক গ্যাস উৎপাদন প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ আগস্ট দৈনিক ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। আর ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সরবরাহ কমে ৬৭৭ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ জানান, জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। দাম বেশি থাকায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা যায়নি। যে কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। আর গ্যাসের সংকট আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে। তিতাসের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৭০০-৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে জিটিসিএল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫০০-৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিন প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। যতটুকু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা গ্রাহকদের মধ্যে সমন্বয় করে দেয়া হচ্ছে। তাতে কারো কারো ক্ষেত্রে গ্যাসের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে।