কসবা উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত (বীর প্রতীক) প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হওয়ায় তাঁর স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কতিপয় সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা ও তার সৎ ছেলের যোগসাজশে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার নিজ বাড়ি কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী গ্রামে এক জণার্কীণ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সস্মেলনে আকলিমা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী মো. মনির আহাম্মদ খান সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতিক ছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী বেনুয়ারা বেগম ২০০৬ সালে মারা গেছেন। প্রথম স্ত্রীর ইমরান খান নামের একজন ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০০৮ সালের ১০এপ্রিল মনির আহাম্মদ খান তাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি দেলী গ্রামেই বসবাস করেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ২০১৩ সালে মনির আহাম্মদ খান মারা যাওয়ার প্রায় কিছুদিন পর আকলিমা আক্তার তার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য আবেদন করলে ২০১৬ সাল থেকে আকলিমা আক্তারের নামে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা শুরু হয়। ওই ভাতা দিয়েই তার সংসার চলত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটি বন্ধ হয়ে যায়।
আকলিমা আক্তার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে খেতাব প্রাপ্ত ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়ার জন্য পুনরায় আবেদন করেন। কিন্ত মনির আহাম্মদ খানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আকলিমার ভাতা বন্ধ করে তাঁর নিজ নামে ভাতা করিয়ে নেয়।
আকলিমা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে গত এক বছরে কমপক্ষ ২০ বার গিয়েছি। যে ধরনের কাগজের চাহিদা আমাকে দেওয়া হয়, সেই সব কাগজই আমি জমা করি। কিন্তু ফাইল থেকে সেই কাগজ সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, তাঁর স্বামীর প্রথম স্ত্রী ছেলে ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তাকে হয়রানী করে ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁর স্বামীর ঢাকায় একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে ইমরান খান বসবাস করেন। ওই বাড়ির দাবী করলে ইমরান খান তাকে ও তার মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডাইরীও করেছেন। এখন ভাতা না পেলে তাকে ভিক্ষা করে খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
আকলিমার মেয়ে মনিরা আক্তার বলেন, আমি পড়াশুনা করতে চাই। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারছিনা। আমি এ বিষয়ে প্রধান মন্ত্রীর সহযোগীতা চাই।
খাড়েরা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কবির আহাম্মদ খান বলেন, আকলিমা প্রায়ত মুক্তিযোদ্ধা মনির আহম্মদ খান (বীর প্রতিক) এর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সে প্রায় ৪বছর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সে পেয়েছে। তার সৎ ছেলে ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিরা অসৎ উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটি বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় আকলিমা আক্তার তার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আমি তার ভাতাটি পুনরায় চালু কররা জোর দাবী জানাচ্ছি।
মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতিক মনির আহাম্মদ খানের ছেলে ইমরান খানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বাবা অসুস্থ্য ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে আমার জানা নেই। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ওই মহিলা আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দেলী গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির আহাম্মদ খান দেলী গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম খান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার খাড়েরা ইউনিয়নের সদস্য মো. খোকন মিয়াসহ গ্রামের স্থানীয় লোকজন।