অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ রাজধানীতে জীবনহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অবৈধ সংযোগ কিংবা গ্রাহকদের ইচ্ছার ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় বাসা-বাড়ি বা অফিসের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরবর্তীতে আবার সংযোগ দেয়া লাগতে পারে এমন বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলো অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন একটি গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন না করলে লাইন লিকেজ হয়ে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের শঙ্কা থাকে। ইতিমধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রাজধানীতেই অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন প্রায় ৪০ হাজার সংযোগ চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি এখন ওসব সংযোগগুলো স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগের রাইজার গ্রাহকের আঙ্গিনায় রয়েছে। সেসবের অনেকগুলো ব্যবহার করে বেশ কিছু সংখ্যক গ্রাহক পরে অবৈধভাবে পুনরায় গ্যাস সংযোগ স্থাপন করে। এমন অবৈধ সংযোগের কারণে তিতাস গ্যাস লোকসানের শিকার হচ্ছে। একইসঙ্গে সেগুলো থেকে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে একটি তিনতলা ভবনে ১২ জন মারা যায় আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে এক বছরের বেশি সময় ধরে যাদের গ্যাস সংযোগ আইনগতভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে তাদের সব ধরনের সংযোগ স্থায়ী বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন সংযোগগুলো থেকে পরবর্তীতে অবৈধভাবে গ্যাসের ব্যবহার এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গওহণ করা হয়েছে। শুরুতে ঢাকার এবং পরে ঢাকার বাইরে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় এই স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রায় এক যুগ পর অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সাথে তিতাস গ্যাস কোম্পানির পক্ষ থেকে বেআইনি বা অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ কার্যক্রমও আরো বিস্তারিতভাবে পরিচালনা করা হবে। তাতে একদিকে যেমন গ্রাহকের নিরাপত্তা বাড়বে, অন্যদিকে অগ্নি দুর্ঘটনা ও গ্যাস অপচয় রোধও সম্ভব হবে। ওই লক্ষ্যে পুরনো জরাজীর্ণ গ্যাস বিতরণ লাইন প্রতিস্থাপন, বিদ্যমান লাইনে কোথাও ছিদ্র থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে মেরামতসহ বেশকিছু কাজের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেজন্য একটি বিদেশি কোম্পানিকে জরিপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই কোম্পানিটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ গ্যাস সংযোগ চিহ্নিত করেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে রাজধানী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহসহ তিতাসের বিতরণ এলাকায় অস্থায়ীভাবে বন্ধ সংযোগ চিহ্নিত করার কাজ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার অস্থায়ীভাবে বন্ধ সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। উত্তর অঞ্চলে থাকা উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, বারিধারা এবং কুড়িল এলাকায় সাড়ে ৩ হাজার এবং দক্ষিণে মতিঝিল, খিলগাঁও এবং পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ৩৭ হাজার গ্যাস সংযোগ অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। ওই সংযোগগুলোর ৯৫ শতাংশই আবাসিক আর বাকি ৫ শতাংশ বাণিজ্যিক ও শিল্প।