শেরপুরের গারো পাহাড়ে মাল্টা চাষে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ করে এমনটাই প্রমাণ করেছেন নালিতাবাড়ীর এক উদ্যোক্তা। আরো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে শেরপুরের পাহাড় ঘেরা ঝিনাইগাতী এবং শ্রীবরদী উপজেলাতেও মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে-এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন ও একই সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাও সম্ভব।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় ঘেঁষা গ্রাম কালাকুমা। এ গ্রামের সফল উদ্যোক্তা মোশারফ হোসেন। সংসারে অভাবের তাড়নায় তিনি ঢাকায় চলে যান। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একসময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন প্লাস্টিক শিল্পের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। পুরনো ঢাকায় প্লাস্টিক ব্যবসায় তার সুনাম রয়েছে। কিন্তু কংক্রিটের ওই শহর আর কারখানার মায়া তাকে ধরে রাখতে পারেনি। মাটির টানে প্রায়ই ছুটে আসেন এলাকায়। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শক্রমে তিনি নিজ এলাকায় শুরু করেন মাল্টা চাষ, তৈরি করেন মাল্টার বাগান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় খামারবাড়ি ঢাকার উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে বারী-এ জাতের মাল্টার চারা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোপন করেন তিনি। বর্তমানে ১৫ বিঘা জায়গা জুড়ে ওই বাগানে এক হাজার চারা রয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তিন বছর বয়স থেকে মাল্টার ফলন আসতে শুরু করে। তবে ৫-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত মাল্টা ফলনের উপযুক্ত সময়। মওসুমে প্রতিটি গাছে গড়ে অন্তত দেড়শ’ মাল্টা ধরে। এ এলাকার মাটি এতোটাই উর্বর যে, মাত্র দুই বছর বয়স থেকে কিছু কিছু গাছে মাল্টার ফলন শুরু হয়। ওই বাগানের মাল্টা পরীক্ষার পর এর স্বাদ ও গন্ধ দুটোই স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।
মোশারফ হোসেন জানান, এ বছরও ছয়শতাধিক গাছে মাল্টার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০-৮০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরেছে। স্বাদে-গন্ধে বাজারে আমদানীকৃত মাল্টা আর এখানে উৎপাদিত মাল্টার মধ্যে পার্থক্য নেই।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টার বাগান করেছেন বলে জানান। আগামী বছর অন্তত ত্রিশ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান বিস্তৃত করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, যেভাবে মাল্টার উৎপাদন ও গুণগত মান দেখা যাচ্ছে, এতে করে সন্দেহ নেই যে শেরপুরের পাহাড়ি এলাকার মাটি মাল্টা চাষ বেশ উপযোগী। মাল্টা চাষে এ এলাকায় বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। তিনি জানান, মাল্টা চাষে খুব একটা ব্যয় নেই। কার্তিক-চৈত্র মাসে দুই দফায় কিছুটা গোবর বা এ জাতীয় সার দিলেই চলে। মাল্টা লেবু জাতীয় ফল বিধায় এতে কীটনাশক বা ঘনঘন সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে মাল্টা চাষ লাভজনক ও ঝামেলাহীন।
গারো পাহাড় জুড়ে মাল্টা চাষ করা গেলে তা দিয়েই দেশীয় চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানও সম্ভব।