নওগাঁর মহাদেবপুরের আলোচিত মিঠুন-শ্যামলী দম্পতিকে টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন ও চুল কর্তন মামলার ২নং আসামি ও রুহুলের অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলামকে (৩০) আটক করেছে র্যাব। সে জেলার পতœীতলা উপজেলার ছোট চাঁদপুর গ্রামের মৃত আবদুল মন্ডলের ছেলে। মামলা দায়েরের পর থেকে সে পলাতক ছিল।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১টায় র্যাব-৫, সিপিসি-৩, জয়পুরহাট র্যাব ক্যাম্পের একটি চৌকস অপারেশনাল দল কোম্পানি অধিনায়ক লে: কমান্ডার তৌকির এর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। তারা মহাদেবপুর উপজেলার দক্ষিণ হোসেনপুর এলাকা হতে তরিকুলকে আটক করেন। পরে তাকে মহাদেবপুর থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, তরিকুল একজন দীর্ঘস্থায়ী মাদকাসক্ত ও প্রতারক সাংবাদিক।
অভিযোগ করা হয়েছে, তরিকুল মিঠুনকে কাজ দেয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে রুহুলের হাতে তুলে দেয়। এ ছাড়া রুহুলের মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী ছিল তরিকুল। এই মামলার ৪ আসামীর মধ্যে এরআগে থানা পুলিশ রুহুলের ২ স্ত্রীকে আটক করে। সম্প্রতি তারা জামিনে মুক্তি পান। গত ২৩ আগস্ট মামলা দায়েরের পর থেকে থানা পুলিশ গত দুসপ্তাহেও ঘটনার মূল হোতা রুহুলকে আটক করতে পারেনি। মামলার বাদী শ্যামলী রাণী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট জবানবন্দী দিয়েছেন।
রুহুলের বাসা ও বয়লার সংলগ্ন টর্চার সেল এলাকা থেকে তরিকুলকে আটকের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট সকালে রুহুল তার কাজ করার জন্য মিঠুনকে তরিকুলের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক তার কার গাড়িতে উঠিয়ে মহাদেবপুরে নিয়ে আসে। সেখানে তার বয়লারের সামনে অবস্থিত টর্চার সেলে মিঠুনকে আটকে রেখে মোবাইলফোনে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। শ্যামলী রাণী তার শাশুড়ির গলার সোনার মালা বন্ধক রেখে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান। কিন্তু রুহুল ও তার লোকেরা আরও টাকা চায়। টাকা না পেয়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিঠুনের পায়ের রগ কেটে দেয়, প্লায়ার দিয়ে চিমটিয়ে হাতের আঙুল জখম করে, হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।
তাকে ঠিকমত খেতেও দেয়া হয়নি। তৃতীয় দিন ১৭ আগস্ট শ্যামলী পত্নীতলা থেকে মহাদেবপুর থানার সামনে এসে এসআই সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়ে রুহুলের বয়লারে যান। সেখানে রুহুল ও তার দুই স্ত্রী শ্যামলীকে বেদম প্রহার করে তার মাথার চুল কেটে দেয়। পরে এসআই সাইফুল সেখানে উপস্থিত হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় শ্যামলী ও তার স্বামীকে রুহুলের টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি রুহুল বা তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেননি। আহত মিঠুন ও শ্যামলীকে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মহাদেবপুর দর্পণ নামক আইডি থেকে লাইফ দেখানোর পর থানা পুলিশ নির্যাতিত মিঠুন শ্যামলী দম্পতিকে ডেকে এনে রুহুল, তার ২ স্ত্রী ও তরিকুলের বিরুদ্ধে মামলা নেয়।