জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। শারীরিক সমস্যা নিয়েই পার করলেন ৪৫ বছর। সমাজের কারো কাছে মাথা নত না করে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে চলেছেন সর্বদা। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের ব্যয় বহন করছেন। হাটবার আসলেই খলসুন (মাছ ধরার যন্ত্র) নিয়ে বসে থাকেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ের সামনে। শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে বেশি খলসুন তৈরি করতে পারেন না। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে খলসুন তৈরি করেন তিনি। সেই খলসুন হাটে বিক্রয় করে চলে সংসার। বলছিলাম শারীরিক প্রতিবন্ধী নির্মল কুমারের কথা।
নির্মলের বাড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার পাহাড়পুর মহল্লায়। তার পিতার নাম নিমাই কুমার। প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। নিজের তেমন আবাদি জমি না থাকায় বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি। ভবানীগঞ্জ হাট সহ মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে নিয়ে বিক্রয় করেন মাছ ধরার বাঁশের তৈরি খলসুন। প্রতিটি খলসুন বর্তমানে বিক্রয় হচ্ছে ২শত থেকে আড়াই শত টাকায়। বাঁশের দাম বেশি হওয়ার কারণে লাভের পরিমান কমে গেছে। বিশেষ করে প্রতিটি বিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খলসুনের চাহিদা কম। প্রায় ৭ বছর হচ্ছে নির্মলের বিয়ের বয়স। এরইমধ্যে তাঁর ঘরে রয়েছে এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে ৪র্থ শ্রেণীতে আর মেয়ে ছোট।
শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার ফলে লেখাপড়াও করতে পারেননি নির্মল। তবে বাবা-মায়ের কাছে শিখেছেন খলসুন তৈরি করা। সেই শিক্ষাই এখন জীবনের একমাত্র উপার্জনের পথ। নির্মল এবং নিপেন দুই ভাই। নিপেনের কোন সমস্যা না থাকায় সে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নির্মল জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সকল কাজ করতে পারিনা। তাই খলসুন তৈরি করে বিক্রয় করে থাকি। খলসুন তৈরির মূল উপাদান তল্লা বাঁশ। ভাল মানের একটা বাঁশ দিয়ে ৩-৪ টা খলসুন তৈরি করা যায়। সেই বাঁশের দাম লাগে ৪ শত টাকার মতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খলসুন তৈরি করলে মাত্র একটা তৈরি করা যায়। আমি যখন হাটে আসি তখন আমার বউ খলসুন তৈরি করে। কারিগরের মূল্য বেশি হওয়ায় লোকজন দিয়ে খলসুন তৈরি করতে পারিনা। নিজেরাই বাড়ি বসে খলসুন তৈরি করি। বছর দু’এক হলে সরকারী সহযোগিতার তালিকায় নাম উঠেছে তার। পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।