রাজধানীর সড়কগুলো পুরো বর্ষাকাল জুড়েই নিদারুণ নির্যাতনের শিকার হয় প্রতি বছর। এই নিয়তি যেন ঢাকাবাসীদের মতো ঢাকার সড়কগুলোও মেনে নিয়েছে। দেখা যায় একটি সংস্থা সড়ক খননের কাজ সেরে ঢালাই করার কিছুদিন পর নতুন রাস্তায় আবার আরেক সংস্থা খুঁড়তে শুরু করে। সড়করা তো এই জুলুমের প্রতিবাদ করতে পারে না, কিন্তু এই খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগের শিকার ঢাকার বাসিন্দারা মাঝে মাঝে প্রতিবাদী হয়ে উঠে, কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় না। যে লক্ষ্যে এই খোঁড়াখুঁড়ি সেই পানিবদ্ধতা থেকেও ঢাকা শহর আজও মুক্তি পায়নি, যদিও যুগ যুগ ধরেই এই সমস্যা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ঢাকা নগরের পিতাদ্বয় অবশ্য প্রতিবারই পানিবদ্ধতার বিড়ম্বনা থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্ত করার সুদৃঢ় আশ্বাস দিয়ে আসছেন, এবং এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ঢাকার চেহারা সেই আগের মতই। সেই থোড় বড়ি থোড়া, থোড়া বড়ি থোড়। মেয়েরদের আশার বাণী শুনতে শুনতেই ঢাকাবাসীদের কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ধন্য আশা কুহকিনী!
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বর্ষাকালে খোঁড়াখুঁড়ি করলে রাস্তার কাজ ভালো হয় না, রাস্তা দ্রুত ভেঙে যায়। এই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও তাহলে কেন রাস্তা খননের কাজ শুরু করা হয় এই ঋতুতে? ঢাকার রাস্তায় আসলে কি এমন রতœ আছে? সোনা, হীরা যাই থাকুক না কেন ওগুলো আহরণের জন্য বর্ষায় অপেক্ষায় থাকে, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সব বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও বর্ষায় কেন খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, রাস্তা খোঁড়ার পরই তা কেন আবার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং এই খোঁড়াখুঁড়ির অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, তাও খুঁজে বের করা জরুরি। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খোঁড়াখুঁড়ির দায়িত্বে বর্তমানে কোথাও ঢাকা ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো; কোথাও সিটি করপোরেশন, বিটিসিএল; কোথাও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্র্রিবিউশন কোম্পানি নিয়োজিত আছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিকে যে সিটি করপোরেশন স্বেচ্ছায় আত্মপ্রণোদিত হয়ে কাজ দিয়েছে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে সরকারের দোহাই, বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর চাপ, প্রভাবশালীদের অনুরোধসহ নানা অজুহাতে অনুমতি নিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে এবং সিটি করপোরেশনও অনুমতি দিতে অনেকটা বাধ্য হচ্ছে। লকডাউন-পরবর্তী রাজধানীর সড়কে এমনিতেই যানজট লেগে আছে। তার ওপর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক স্থানে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমনকি এ কারণে কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানিবদ্ধতা হচ্ছে এবং যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল হচ্ছে ব্যাহত। পরিপ্রেক্ষিতে, রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। ট্রাফিক সদস্যদের এ যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আমরা জানি, নগরবাসীর ভোগান্তি কমিয়ে আনতে ২০০৩ সালে ঢাকার সড়ক খনন নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য একটি নীতিমালা প্রণীত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গঠিত 'ঢাকা শহরে সুশাসন ও উন্নয়ন' শীর্ষক সেলের পরামর্শক্রমে তৈরি ওই নীতিমালাটি শুরুতে বিভিন্ন সংস্থা কিছুটা মানলেও পরে আর কেউই মানছে না। বর্ষা মৌসুমে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তা না খোঁড়া ছাড়াও কোনো প্রধান সড়ক খননের জন্য একবার কোনো সংস্থাকে অনুমতি দেওয়ার পর অপরিহার্য না হলে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে ওই সড়কে আর কাউকে খননের অনুমতি না দেওয়ার কথা নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। এমনকি খনন শুরুর ১৫ দিন আগে এলাকায় মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার, প্রয়োজনীয় জননিরাপত্তামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া, সাইনবোর্ডে খননের উদ্দেশ্য এবং কাজ শুরু ও সমাপ্তির তারিখ প্রদর্শন কিংবা অনিবার্য না হলে খননকাজ শুধু রাতে করে সকালের আগেই আবর্জনা সরানোর কথাও নীতিমালায় লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্টভাবে। কিন্তু মসীলিপ্ত থাকলে কি হবে অসি আর মামার জোরেই নিয়ম-নীতি সব উল্টে যাচ্ছে।
নগরের পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমাদের শুধু ওই রাস্তা খননের দিকেই ঝোঁকটা বেশি, কেননা ওখান থেকে মণিমুক্ত লাভেরও একটা ব্যাপার জড়িয়ে আছে। এই আত্মস্বার্থের বৃত্তে আটকা পড়ে আমরা সমস্যাটাকে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারছি না। এই সমস্যার পেছনে যে একটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আছে, এবং শুধু খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, সেই সঙ্গে ঢাকার গাছপালা বৃদ্ধিতে যে কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে হবে সেদিকে আমাদের আগ্রহ কম। ব্যাপক গাছপালা লাগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মধ্যে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করাটাও ভীষণ জরুরি। তা না হলে অপরিকল্পিত ভূমি উন্নয়ন, দখল ও ভরাটের ফলে খাল বা লেক কমে যাওয়ার মাশুল হিসেবে পানিবদ্ধতা আরও প্রকট হয়ে উঠবে। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে পানিবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপই নেই। তাদের আছে শুধু জাঁকালো প্রতিশ্রুতিমালা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে পানি প্রবাহের ব্যবস্থাপনা ২০ বছর আগেই পরিবর্তন করেছে, সেখানে আমাদের দেশ শুধু রাস্তা খনন আর খাল উদ্ধারের মধ্যেই ব্যবস্থাপনা সীমাবদ্ধ রেখেছে। ফলে সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান আমরা পাচ্ছি না।
ঢাকা শহরের এই মুমূর্ষু অবস্থার জন্য মূলত অপরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থাই অনেকাংশে দায়ী। শহরটা গড়ে উঠেছে ভুল পদ্ধতিতে। একের পর এক ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে, কিন্তু পানি প্রবাহের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। পানিবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেই। যদিও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয় কখনোসখনো, সেগুলো মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। ঢাকার জলাধার ভরাট করার কারণে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও পানিবদ্ধতা নিরসন করা যাচ্ছে না। জলাধার ভরাট করার পাপের প্রায়াশ্চিত্ত্ব কোটি কোটি টাকাতেও হচ্ছে না। খাল নির্বিচারে দখল হয়েছে। সরকারের চোখের সামনেই তা হয়েছে। খাল দখলের ফলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
কিছুদিন আগ পর্যন্তও ঢাকা মহানগরীর প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার এবং শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের। ঢাকা শহরের মোট ড্রেনেজ লাইনের ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে ছিল। এ ছাড়া ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসার ছিল। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের স্বহস্তে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার ফলে জনমনে আশা জেগেছিল যে এবার হয়তো পানিবদ্ধতার বিপত্তি থেকে মুক্তি মিলবে। পুরোপুরি মুক্তি না মিললেও, অবস্থার যে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন আসবে এ ব্যাপারে অনেকেই ছিলেন দ্বিধামুক্ত। ওয়াসার কাছ থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন খাল থেকে স্কেভেটর ব্যবহার করে ১১ হাজার ৬৩৮ টন ভাসমান বর্জ্য অপসারণ করেছে। ঢাকা ওয়াসা থেকে পাওয়া ১৮০ কিলোমিটার স্ট্রর্ম স্যুয়ারেজ ড্রেনের মধ্যে ৯৪.৭১ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কারের জন্য ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি আঞ্চলিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে মগবাজার, মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরসহ বনানী রেলগেট থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ, পাইপলাইন স্থাপন করেছে তারা। কিন্তু এতকিছুর পরও চলতি বর্ষায় পানিবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পায়নি রাজধানীবাসী। সেই চিরচেনা ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বা হচ্ছে এবারও। বর্ষা শুরু হতে না হতেই খাল খননের ভোগান্তি, এবং বর্ষা শুরুর পর পানিবদ্ধতার ভোগান্তি।
রাজধানী ঢাকা সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর হতে ঢাকার জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসাথে বর্ধনশীল জনসংখ্যাকে ঘিরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসস্থান গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত উপায়ে। বর্তমান হিসেবে ঢাকা শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল খোলা জায়গা ও রাস্তাঘাট রয়েছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে পুরো শহর ছেয়ে গিয়েছে কংক্রিটের মোড়কে।
উল্লেখ্য যে, বাড়িঘর, শিল্প-প্রতিষ্ঠান আর যানবাহনের পরিমাণ বা ঘনত্ব বিবেচনায় এই খোলা জায়গা ও রাস্তার পরিমাণ ৪-৫ শতাংশের বেশি হবেনা। আবার তূলনামুলকভাবে উঁচু জায়গা ব্যবহারের পাশাপাশি নিচু জায়গাসমূহ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে বছরের যেকোনো সময়ে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় তীব্র পানিবদ্ধতা। আর এই পানিবদ্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। নগর জীবন থেকে শুরু করে উৎপাদনমুখী কৃষিক্ষেত্রেও যার প্রভাব রয়েছে বিস্তর।
পানিবদ্ধতায় একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হচ্ছে, একইসাথে এর প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রেও। কর্মঘণ্টার হিসেবে মানুষের বহু সময় ব্যয় হচ্ছে রাস্তাঘাটে আটকে থেকে। স্থবির হয়ে যাচ্ছে পথচলা ও পরিবহণ। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের শুধু রাজধানী ঢাকাতেই এই সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে এমনটা নয়। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনাসহ প্রতিটা মেগাসিটিতেই রয়েছে এই সমস্যা। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও জলাবদ্ধতার প্রভাব প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।
পানিবদ্ধতার একটি অন্যতম ক্ষতিকর অনুষঙ্গ হলো যানজট। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণা জরিপে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক যানজটের এক ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠে। শুধু যানজটের কারণে ঢাকা শহর প্রতিবছর প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ওই জরিপে এটাও উল্লেখ করা হয় যে, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা হাতে নিলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব।
একাধিক গবেষণামূলক প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ঢাকার মোট ৬৫টি খালের মধ্যে ৪৩টি খালই অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে এবং ২৪টি খাল আংশিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তৈরিকৃত এক তালিকায় দেখা যায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কসাইবাড়ি খালসহ রামচন্দ্রসাগর খাল, কাটাসুর খাল, কসাইবাড়ি খাল, এবং কল্যাণপুর খালে প্রায় ৩২৪টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। একদা প্রবাহিত খালগুলোর মধ্যে বিলুপ্তির আশংকায় আছে মোট ২৬টি খাল এবং ২০টি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ১২টি খাল প্রবাহিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে এবং ২১টি খাল প্রবাহিত হতে পারছে বর্ষাকালে৷
একদিকে শহরের অভ্যন্তরীন খালগুলোর বেহাল দশা আর অন্যদিকে আশপাশে থাকা নদীগুলো প্রতিদিন অধিকতর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সমস্যা আরো গুরুতর রূপ নিচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা এবং তুরাগ নদী অবৈধ দখল, আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত। বালু নদী বর্তমানে চরম নাব্যতা সংকটে ভুগছে এবং নদীটির উপর অপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনের অধিক ব্রিজ নির্মাণ করায় এটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। একইসাথে প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য এবং শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বালির ব্যবসাও একটি লক্ষ্যণীয় ক্ষতিকর কারণ।
অন্যদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্যেও ঢাকার পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের বিভিন্ন জায়গায় পানিবদ্ধতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, যেখানে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় মোট পুকু্ররে সংখ্যা ছিল ২ হাজারটি সেখানে ২০০৭ সালে তা নেমে আসে ২০০’ র দিকে এবং বর্তমানে মোট পুকুরের সংখ্যা ১০০ টিরও কম। আড়াই হাজার ক্যাচপিটের মধ্যে বর্তমানে প্রায় এক হাজারটি ক্যাচপিট বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে দখল-বেদখল, অবৈধ স্থাপনা আর অব্যবস্থাপনা পানিবদ্ধতা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
অদ্যাবধি ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলকৃত খালগুলো পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে এই পরিকল্পনা কতোটা কার্যকরী হবে সেই প্রশ্ন যেমন থেকে যায় তেমনি কত সময়ের প্রয়োজন হবে সেটাও এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু এই সমাধানের আশায় থেকে ততদিন পানিবদ্ধতার সংকট বয়ে বেড়ানো শহরবাসীর জন্য যেমন অসহনীয়, তেমনি অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকা- চালিয়ে নেওয়াটাও হবে বেশ দুরূহ।
তাহসিনুল ইসলাম : কথাশিল্পী