মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ মাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়া অকুতো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর জব্বার (৮০) এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জীবন যুদ্ধে হাপিয়ে পড়া বয়োবৃদ্ধ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ্যতার কারণে আজ অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন। এখন দিন কাটে তার অনাহারে অর্ধাহারে। সহায় সম্বলহীন এই মুক্তিযোদ্ধা অর্থাভাবে পারছেন না চিকিৎসা করাতে। মাত্র ২ শতাংশ জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর বানিয়ে কোনমতে মাথা গুজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। রোদে পুড়ে আর ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করেন অতিকষ্টে। মনে হচ্ছে জীবন যুদ্ধেও তিনি হার না মানা লড়াকু সৈনিক। আয়ের কোনো উৎস না থাকায় ভরসা একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভাতার উপর। এরমধ্যে ৫ ছেলে ৬ মেয়েসহ ১৩ সদস্যের এই পরিবারটির দিন কাটছে অতিকষ্টে। হতদরিদ্র বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল জব্বার শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের ইন্দিলপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা ফকির মাহমুদ আর মা তারা বানু গত হয়েছেন অনেক আগেই। তারা ৬ ভাই। তার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়াও মারা গেছে প্রায় এক যুগ আগে। লাল মিয়ার সন্তানরাও থাকেন তার মতো ঝুপড়ি ঘরে। এই বাড়িতেই থাকেন তার অন্যান্য ভাই আর তার সন্তানরা। সবাই দারিদ্র সীমার নিচে। তারাও থাকেন ঝুপড়ি ঘরেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর জব্বার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অভাবের তাড়না আর জীবন জীবিকার যুদ্ধে ভুলে গেছেন একাত্তরের লড়াইয়ের ময়দানের অনেক কথাই। গাড়ীর ড্রাইভার ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ডাক এলে তিনি যোগ দেন শ্রীবরদীর মুজাহিদ কমিটিতে। পরে ট্রেনিংয়ের জন্য চলে যান ময়মনসিংহে। ট্রেনিং শেষে যান মুধুপুরে পাকসেনাদের সাথে সন্মুখ যুদ্ধে। কয়েকদিন পর গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। ফিরে আসেন তারা। পরে যান ভারতের পোড়াকাশিয়ায়। এখান থেকেই সহযোদ্ধাদের সাথে যান নেত্রকোনায়। সেখানে পাক সেনাদের ক্যাম্পে হানা দেন। সন্মুখ যুদ্ধ করে পুড়িয়ে দেন পাক সেনাদের ক্যাম্প। পরে আসেন কামালপুরে। সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকায় খন্ড খন্ড যুদ্ধে অসংখ্যবার পাক সেনাদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে ৫ ডিসেম্বর বকশিগঞ্জে এসে প্রথম লাল সবুজের পতাকা উত্তোলনে অংশ নেন তিনি। পরে ময়মনসিংহ ক্যাম্পে গিয়ে জমা দেন অস্ত্র। এরপর ফিরে আসেন বাড়িতে। দেখেন রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘর সব লুট করে নিয়ে গেছে। সেই থেকে নেমে পড়েন আরেকটি যুদ্ধে। আজো চলছে তার জীবন যুদ্ধ। আবদুল জব্বার বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসেছি। পাকা ঘরে থাকবো। একটু চিকিৎসার সুযোগ পাবো। এটাই আমার আশা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর দিচ্ছেন। তিনি যদি অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বারকে একটা ঘর দেন তাহলে বৃদ্ধ বয়সে একটু হলেও স্বস্তির নি:শ্বাস ছেড়ে জীবনের শেষ দিনগুলো আয়েস করে ঘুমাতে পারতেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ¦ আমিনুল ইসলাম বলেন, তার নামে জমি না থাকায় তাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি যাতে তাকে একটি ঘর দেয়া যায়।