কয়েকটি মামলায় সাজা হওয়ায় বন্দি রয়েছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে সাজা খাটার মেয়াদ নাকি শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও মিলছেনা মুক্তি। যে কারণে মুক্তির আশায় বার বার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট করছেন। তার আইনজীবী চারটি মামলার বর্ণনা দিয়ে হাইকোর্টকে বলছেন, সাজা খাটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাকে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আসামির মোট মামলার সংখ্যা ১১টি। কোন রায়েই উল্লেখ নেই যে, সব মামলার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে। তাই জেল কোড অনুযায়ী, একটার পর একটা সাজা কার্যকর করা হবে। এভাবে তাকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে।
এই কয়েদির নাম জহির উদ্দিন। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন শিরোইল এলাকায়। এলাকায় প্রতারক হিসেবে পরিচিত জহির কারাগারে গিয়েছে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। এর আগে ২০১৭ সালে তিনটি মামলায় ৬ মাস করে এবং একটি মামলায় তিন মাস জহিরের কারাদন্ডাদেশ দেন রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মুত্তাহিদা হোসেন। তবে একসঙ্গেই সবগুলো কার্যকর হবে কি না সে বিষয়ে ওই রায়ে উল্লেখ নেই। সে হিসাবে চার মামলায় মোট ২১ মাস কারাভোগ করেছেন জহির। এই চার মামলার সাজা খাটা শেষ হয়েছে। এখন অন্যান্য মামলার সাজার হিসাব শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
এ কারণে মুক্তির লক্ষ্যে সম্প্রতি আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। এতে রাষ্ট্রসচিব, আইন সচিব, রাজশাহী যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়। রিটে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২১ মাস সাজা খাটা শেষ হলেও তাকে আরও ২৩ মাস আটকে রাখা হয়েছে। এ রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। এরপর শুনানি শেষে এক আদেশে জহিরকে কারাবন্দি রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং মেয়াদের ‘বেশি’ সাজা খাটার পরও তাকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। তবে এই রিটের বিষয়ে রাজশাহীর এক সিনিয়র আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা তাদের মতামতে বলছেন সহজ রাস্তায় না গিয়ে উল্টোভাবে মুক্তির চেষ্টা করছেন কয়েদি জহির।
এ বিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতারণা ও চেক জালিয়াতিসহ জহিরের বিরুদ্ধে এ ধরনের মোট ১১টি মামলা রয়েছে। আর সব মামলাতেই সে সাজাপ্রাপ্ত। মামলাগুলোর কোনটিতে ছয়মাস, কোনটিতে চারমাস- এভাবে সাজা আছে। কিন্তু একসঙ্গে সব মামলার সাজা কার্যকর হবে কি-না তা কোন মামলার রায়ে উল্লেখ নেই। তাই জেল কোড অনুযায়ী আমরা একটার পর একটা সাজা কার্যকর করছি। আর এভাবে চললে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তার মুক্তি মিলতে পারে। আর নতুনভাবে রিট করেছেন কি-না সে বিষয়ে জানিনা।
কারণ আমাদের কাছে জহিরের বিষয়ে আর কোন রিটের কপি আসে নাই উল্লেখ করে জেল সুপার বলেন, ‘সাজার মেয়াদ শেষ হলেও আটকে রাখা হয়েছে দাবি করে এর আগেও হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কয়েদি জহির আইনজীবীর মাধ্যমে রিট করেছিলেন। সেই বেঞ্চকে অন্য মামলায় তার সাজা থাকার বিষয়টা জানিয়েছি। মূলত, যে মামলাগুলোর সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে শুধু সেগুলোর বর্ণনা দিয়েই তিনি হাইকোর্টে রিট করিয়েছিলেন। ওই রিটে জহিরের অন্য মামলায় সাজার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ওখানে লাভ না হওয়ায় হয়তো আরেকটি বেঞ্চে রিট করা হয়েছে। তবে রিটের কপি নতুনভাবে আসলে তা দেখে জেল কোড মোতাবেক আমরা জবাব দিব।’
একাধিক মামলায় দন্ড থাকা এবং আসামিও কারাগারে থাকলে কীভাবে সাজা কার্যকর হবে, এমন প্রশ্নে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, রায়ে যদি আদালত উল্লেখ করে দেন যে, সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে, তাহলে সেভাবেই হবে। কিন্তু সেটা না থাকলে আলাদা আলাদাভাবেই একটার পর একটা সাজা কার্যকর হবে।
তবে আসামির আছে সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকর করার সুযোগও আছে উল্লেখ করে এই আইনজীবী জানান, সেক্ষেত্রে আসামি যখন কারাগারে যান তখন যে যে আদালতে তার দন্ড হয়েছে আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টা সেইসব আদালতকে অবহিত করে আবেদন করতে হয়। এতে গ্রেপ্তারকৃত মামলার সঙ্গে যেন তার অন্য মামলাতেও সাজা কার্যকরের হিসাব শুরু করা হয় বিষয়টি আবেদনে উল্লেখ করতে হবে। তাহলে আদালত চাইলে সকল মামলার সাজা এক সঙ্গে কার্যকর করার আদেশ দিতে পারেন। তাই এই আসামির নিম্ন আদালতকেই তার গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টা অবহিত করার প্রয়োজন ছিলো। এটা না করেই মুক্তির জন্য উচ্চ আদালতে রিট করাটাকে ‘উল্টে পথে’ হাটছেন বলেও মন্তব্য করেছেন এই সিনিয়র আইনজীবী।