গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে রাজনৈতিক দলগুলো মুখে ফেনা তুলে ফেললেও এবারে দিবসটি নীরবেই কেটে গেল। শুধু রাজনৈতিক দল নয় দেশের সুশীল সমাজ হিসেবে যারা জাতীয় সংকটে জাতীয় সমস্যা-সম্ভাবনাময় নানা কথা বলেন, তারাও দিবসটি নিয়ে কোনো কথা বলেন নি। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসের সংখ্যা ১৮০ বা তারও বেশি। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসও জাতিসংঘ ঘোষিত তেমন একটি দিবস, যা জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলো ২০০৮ সাল থেকে পালন করছে। ২০০৭ সালের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬২তম অধিবেশনের ৭ নম্বর রেজুলেশনে ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতে প্রতিবছর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো দিবসটি পালন করছে। অবশ্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাশ হওয়া যে কোনো রেজুলেশন সব সদস্য রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই পালনীয় ও অনুসরণীয়।
১৯৮৮ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো প্রথমবারের মতো স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হওয়া রাষ্ট্রগুলো নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। নাম দেওয়া হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন নিউ এ- রোস্টের্ড ডেমোক্রেসি (আইসিএনআরডি)। সেই সম্মেলনে নতুন করে গণতন্ত্র পাওয়া দেশগুলোর গণতন্ত্র সংহত করণের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের আন্ত-সংসদীয় ইউনিয়ন (আইপিইউ) ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অন ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে এক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর ১০ বছর পর ২০০৭ সালে জাতিসংঘ ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করে সদস্য দেশগুলো দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলায় গণতান্ত্রিক সহনশীলতা শক্তিশালী-করন’।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহনশীলতার খুব অভাব। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের যে কোনো বক্তব্য বা কর্মসূচিকে ভর্ৎসনা করা হয়, শিষ্টাচার বর্জিত ভাষা ব্যবহার করা হয়। আর গণতন্ত্র তো এখন আইসিইওতে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে মধ্যরাতের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করছেন কেউ কেউ। তবে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনগুলো সরকারি দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ১৬০ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৪৩ জন সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের কতটা নির্বাচিত বলা যায় তা বিতর্কিত। এ ছাড়া নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাচ্ছেন। যা গণতন্ত্রের জন্য নতুন সংকট তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক নানা দিবস পালন নিয়ে দেশের দৈনিক ও সাময়িকীগুলো নানা লেখা লিখলেও এবার তেমন কোনো লেখা চোখে পড়ে নি। সরকার বিরোধী দলগুলোও এ নিয়ে কোনো কর্মসূচি রাখে নি। গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না-কামী দেশের সব রাজনৈতিক দলের এমন নীরবতা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা চাই গণতন্ত্র নিয়ে সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি হোক এবং তা করতে হবে গণতন্ত্র নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে।