আবুল কালাম আজাদ। গ্রামীণ আবহে জন্ম নেয়া, বেড়ে উঠা একজন মানুষ। পড়াশুনা করেছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রী এমএসএস। চাকুরীর পেছনে ছুটে বেড়াননি কখনো। সবসময় নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। মুলতঃ উচ্চশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও পৈত্রিক জমি আঁকড়েই সাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন তিনি। এমন প্রত্যাশা থেকেই কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের সিধনগ্রামের আবদুস সামাদ মাষ্টারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ পৈত্রিক জমিতে শুরু করেন হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ। প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে এ চাষ শুরু করলেও এ বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ১ হাজার পেঁপের চারা রোপন করেন তিনি। আর তাতে পেয়ে যান সাফল্য। পেঁপের বাম্পার ফলনে ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে তার আর্থিক অবস্থা।
চারা রোপনের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই ফলন পেতে শুরু করেন তিনি। একেকটি পেঁপে ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়েছে। বিশাল আকৃতির এই পেঁপে চাষ করে এলাকার সবার দৃষ্টি কেড়েছেন আজাদ। প্রতিদিন লোকজন আসছেন পেঁপে বাগান দেখতে। অনেকেই এখন তার সাথে কথা বলে পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। অনেকে বাগান করা শুরুও করেছেন।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে কেউ পেঁপে চাষ করে স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি সাবলম্বীও হতে পারবেন। জমি তৈরী, চারা, সার, বালাইনাশক, রোপন, আগাছা পরিস্কার ও শ্রমিকের টাকাসহ প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। এখন গাছ থেকে প্রায় প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ মন কাঁচা-পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে লাভের অঙ্ক বেশি হওয়ায় তিনি পাকা পেঁপেই বেশি বিক্রি করছেন। প্রতিমন পাকা পেঁপে বাগান থেকে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে পাকা পেঁপে সংগ্রহ করে এ জেলা ছাড়াও রংপুর-বগুড়ার হাটে বিক্রি করছেন। বাগান করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রি করে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। তার মুখেও সেই ছাপ স্পষ্ট। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছরে আরো ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে আগামী বছরেও প্রায় এমন ফলনই আশা করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। তবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আরো বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারতেন বলে আজাদ জানান।
পেঁপে বাগান দেখতে আসা স্থানীয় মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পরিশ্রম ও লক্ষ্য অটুট থাকলে কৃষি কাজে সফল হওয়া সম্ভব। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আবুল কালাম আজাদ। তিনি পেঁপে বাগান করে বাজিমাত করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহ পাচ্ছেন পেঁপে চাষ করার।
পলাশবাড়ীর অনেক গ্রামেই এখন সবুজ-হলুদ পেঁপের সারিবদ্ধ গাছের দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য সকলের চোখ টানছে। কৃষকরাও পাচ্ছেন লাভের পরশ। সেইসাথে অভাব নামক শব্দটি উধাও হচ্ছে গ্রামীণ জনপথ থেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ বেড়েছে এ উপজেলায়। হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করে স্বল্পসময়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পেঁপে চাষে অনেক কৃষকই এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পেঁপে চাষীদের বিভিন্ন ভাইরাস মোকাবেলাসহ সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।