ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজ সেবক, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদানকারী জাতীয় বীর, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন সরকারের সভাপতিত্বে শহীদ ময়েজউদ্দিনের স্মরণসভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বকর চৌধুরীর সঞ্চালনায় স¥রণসভায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শহীদের কন্যা মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি মেয়র এড. মো. জাহাঈীর আলম, নরসিংদীর পলাশ উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ ডা. আনয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ এমপি, কালীগঞ্জ উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক, থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমান, কালীগঞ্জ পৌর মেয়র এস এম রবিন হোসেনসহ জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ ময়েজউদ্দিন ১৯৩০ সালে ১৭ মার্চ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলাধীন মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপির বাবা। শহীদ ময়েজউদ্দিন ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ আহ্বায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে ওই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)’র মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ময়েজউদ্দিনের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সব্বোর্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান “স্বাধীনতা পদক”-এ ভূষিত করেন। ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ২২ দল আহূত হরতালের আহ্বান করে। ওইদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মিছিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন নেতৃত্ব দেন। ওই সময় কালীগঞ্জ বাজার এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।