রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের কোয়ালীপাড়া গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ার ঘটনা কে কেন্দ্র করে গত ২৯ জুন স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী কে খুনের অভিযোগ উঠে। প্রাথমিক ভাবে হত্যার কোন প্রমাণ না পাওয়ায় পুলিশ নিহতের স্ত্রী কে তখন ছেড়ে দেয়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যার প্রমাণ পেয়ে ঘটনার তিন মাস দশদিন পর অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেফতার করলো পুলিশ।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জুন কোয়ালীপাড়া গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দীনের তৃতীয় ছেলে হোসেন আলীর (৩৫) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। প্রতি দিনের ন্যায় ঘটনার দিন ২৯ জুন হোসেন আলী তার বাড়ির পার্শে কোয়ালীপাড়া বাজারে সন্ধ্যায় চা খেয়ে রাত আনুমানিক দশটার দিকে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ৮ টার দিকে তার স্ত্রী চম্পা বিবি ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখে যে তার স্বামী নড়াচড়া করছেনা। এর পর তার প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন। তারা এসে দেখে হোসেন আলী মারা গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শনে গেলে পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে চম্পা বিবি। চম্পা বিবির অসংলগ্ন কথা বার্তায় সন্ধেহ হয় পুলিশের। পরে চম্পা বিবিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে ময়না তদন্তের জন্য লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠায় পুলিশ। অবশেষে ঐ দিন বেলা তিনটার দিকে চম্পা বিবিকে মৃত হোসেন আলীর বড় ভাই কাশেম আলী ও হাসান আলীর জিম্মায় ছেড়ে দেয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের চাঁইসারা গ্রামের কাশেম আলীর মেয়ে অভিযুক্ত চম্পা বিবির (৩২) সাথে প্রায় ১৮ বছর আগে নিহত হোসেন আলীর বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিবাহের পর থেকেই চম্পা বিবি প্রতিবেশি ৩/৪ জন পুরুষের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। দূর্বল ও অসহায় হোসেন আলী সংসার ভেঙ্গে যাবার ভয়ে তাকে শাসন করলেও তালাক দেননি।
এদিকে সম্প্রতি ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসে পৌছায়। এতে প্রমানিত হয় যে হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়েছে। এর পর থেকে পুলিশ অভিযুক্ত চম্পা বিবিকে খুঁজতে থাকে। বিষয়টি বুঝতে পেরে চম্পা বিবি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে নিহত হোসেন আলীর বড় ভাই হাসান আলী বাদী হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর বাগমারা থানায় চম্পা বিবিকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শনিবার (০৯/১০/২০২১) ঢাকার শফিপুর এলাকার এক ভাড়াবাড়ি থেকে সকাল ৮ টার দিকে চম্পা বিবিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মজিদ বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য কেউ যদি এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকে তাদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, আগামীকাল রোববার চম্পা বিবিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে।