করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে প্রায় দেড় বছর ধরে সারাদেশের মত রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে অকেজো হয়ে গেছে এ উপজেলার অধিকাংশ স্কুল–কলেজের ল্যাপটপ, প্রজেক্টরসহ অন্যান্য ডিজিটাল শিক্ষাসামগ্রী। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও ব্যাহত হচ্ছে ডিজিটাল শিক্ষার কার্যক্রম।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একযোগে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর বিনা মূল্যে সরবরাহ করে সরকার। অথচ অভিযোগ আছে, লাখ লাখ টাকার সরকারি এই সম্পদগুলো সংরক্ষণ ও ব্যবহারের অভাবে এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন নিজেও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও প্রজেক্টর রয়েছে ৯টি কলেজ, ৭টি মাদ্রাসা, ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি কারিগরি বিদ্যালয়ে। অপরদিকে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর রয়েছে ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অথচ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাপটপ, প্রজেক্টরসহ অন্যান্য ডিজিটাল শিক্ষাসামগ্রী বর্তমানে অকেজো অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। টেবিলে সাজানো কম্পিউটারগুলো অধিকাংশই অকেজো অবস্থায় রয়েছে ব্যবহার না করার কারণে।
যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে। কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর শিক্ষার্থীদের কাজে লাগছে না।
উপজেলার উত্তর মেরামাতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন সময়ের পরে আমাদের ল্যাবে আর ক্লাস হয়নি। সচল কিংবা অচল জানা নেই। করোনার আগে থেকেই আইসিটি ক্লাস শুধুমাত্র বই পড়ে মুখস্ত করি।
উপজেলার রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজদার রহমান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ল্যাবে ১৭ টি ল্যাপটপ আছে। করোনাকালীন সময়ে ২টি অকেজো হয়েছে গেছে। এছাড়াও আমাদের ডিজিটাল ল্যাবের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে ল্যাব কোনো কাজে আসছেনা।
চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকলেও আমরা প্রতিনিয়ত ডিজিটাল ডিভাইস গুলো সচল রাখতাম। তারপর ৫টি ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে। প্রজেক্টর নষ্ট না থাকায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, সরকারী ভাবে নির্দেশনা থাকলেও আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান তা মানেনি। এজন্যই ল্যাবগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আরো যতœবান হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, পাঠদান বন্ধ থাকলেও ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলো সচল রাখতে আমাদের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নির্দেশনা মানেনি। যার ফলে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের ল্যাব, প্রজেক্টর অকেজো হয়ে গেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো সংস্কার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।