আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের বাইনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কাম সাইক্লোন শেল্টার) এর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের ছাদে নিয়ে একাধিকবার অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পরিবার স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করেছেন।
অনৈতিক কর্মের শিকার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ও তার বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী (নাম প্রকাশ করা হলোনা) জানায়, বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) তারা দু’বোন স্কুলের কাছে গেলে প্রধান শিক্ষক রাহাজ্জান আলী স্কুলের নিচের ফ্লোরে দাড়িয়ে বড় বোনকে কাছে আসতে বলেন। সে বাড়িতে মা নেই রান্না করবে যেতে পারবেনা জানালে, প্রধান শিক্ষক তোদের বাড়িতে যাব বলে তাদের সাথে যেতে থাকে। পেয়ারা আছে, খাব বলে আব্দার করে। তাদের পেয়ারা গাছ ছোট পেয়ারা নেই বললে কিছুদূর গিয়ে ফিরে দাড়ায় এবং ছোট বোন (শিশু শ্রেণি) তাকে নিতে চায়। যেতে রাজী না হলেও তাকে শেষমেষ সাথে নিয়ে স্কুলে গিয়ে স্কুলের ছাদে যায়। সেখানে তাকে প্যান্ট খুলতে বলা হয়। খুলতে না চাইলে তিনি নিজেই তার প্যান্ট খোলেন এবং নিজের প্যান্টের চেইন খোলেন। এরপর অশালীন ও অনৈতিক কাজের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাকে কাউকে কিছু না বলেতে হুমকী দেয়। শিশুটি তার বোনের ডাকে বেরিয়ে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বাড়িতে গেলে তার মা জানতে পেরে মেয়ে ও শ্বাশুড়ি, শ্বশুরকে নিয়ে স্কুলে গিয়ে ঘটনা জানতে গেলে কথাকাটাকাটি হয়। তখন বেরিয়ে আসে শিক্ষকের পূর্বের এহেন অনৈতিক আরেক কান্ড। এঘটনার কয়েকদিন আগে তিনি ৩য় শ্রেণির এক ছাত্র ও ঐ শিশুটিকে নিয়ে একই ভাবে ছাদে গিয়ে প্যান্ট খুলিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডের অবতারনা করেন। সেদিনও তাদেরকে বিস্কুট দিয়ে একথা কাউকে না বলেতে শাসিয়ে দেয় এবং বললে কি করা হবে ইঙ্গিত দিয়ে হুমকীও দেওয়া হয়েছিল।
অভিযোগ জানতে পেরে পুলিশ শুক্রবার ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেন। ঘটনার শিকার শিশু দু’টিসহ অভিভাবকরা ঘটনার আদ্যোপান্ত পুলিশকে জানায়। সাংবাদিকরা শুক্রবার ও শনিবার ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষকের কূকীর্তির বর্ণনা নিস্পাপ কচি মুখের বাল্যসুলভ ভঙ্গিতে প্রকাশ করতে দেখেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ছিঃছিঃ পড়ে গেছে। তাদের দাবী অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এব্যাপারে স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুমিত্র সানা ও ফাতিমা খাতুন জানান, প্রধান শিক্ষক বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত জুম অ্যাপসের মাধ্যমে মিটিং করেন। আমরা দু’জন ক্লাশ নিয়েছি। ক্লাস শেষে আমরা খেতে ও নামাজ পড়তে যাই। কখন কি হয়েছে আমি দেখিনি বা জানিনা। তবে ১.২০ টার দিকে প্রধান শিক্ষক ৫ম শ্রেণিতে ক্লাশ নিতে যান। ১.৪৫ টার দিকে শিশুটির অভিভাবকরা অফিসে এসে তাদের মেয়ের সাথে অনৈতিকতা কেন ঘটান হলে জানতে চেয়ে বড় কণ্ঠে কথা বলতে থাকলে সকলেই বিষয়টি জানতে পারেন। তাদের হিসেব মতে দুপুর ১২ টা থেকে ১.২০ টার মধ্যে ঘটনা ঘটে থাকলে ঘটান হয়েছে।
এসএমসি সদস্য নিত্য রঞ্জন সরদার বলেন, মেয়ের মাসহ অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার ঘটনার সময় তাকে প্রধান শিক্ষক ফোনে জানান। পরে আমি স্কুলে ও মেয়ের বাড়িতে গিয়ে সভাপতিকে জানিয়ে কি করা যায় করা হবে বলে জানিয়ে আসি।
প্রধান শিক্ষক রাহাজ্জাহান মোবাইলে জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পূর্ব পরিকল্পিত। স্কুলের নিচের ফ্লোরে তাস খেলা ও মাদকসেবীদের আড্ডা বন্দের চেষ্টা করা এবং ইটভাটা কেন্দ্রীক বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে তাকে মিথ্যা ঘটনায় জড়িয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
ক্লাস্টার অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সেলিম জানান, ঘটনা আমার নলেজে এসেছে। প্রাথমিক ভাবে খোজখবর নিয়েছি। পুলিশ ঘটনা তদন্তে গিয়েছিল জেনেছি। কাল (রবিবার) বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমি স্কুলে যাব বলে তিনি জানান।