রাজশাহীর জেলার সবচেয়ে কাছের উপজেলার নাম পবা। দুইটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে এই পবা উপজেলা। যে উপজেলাটির আইন শৃঙ্খলা দেখভাল করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। আর রাজশাহী মহানগরীতে যেদিক থেকেই প্রবেশ এবং বাহির হোক না কেন তাকে পবা উপজেলার সীমানায় ঢোকায় লাগবে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলায় শূন্য রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। বেশকিছুদিন থেকে গুরুত্বপূর্ন পদ দুটি শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ।
এ উপজেলাটির সীমানা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পবা উপজেলার উত্তরে মোহনপুর ও তানোর উপজেলা, দক্ষিণে চারঘাট উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে পুঠিয়া ও দূর্গাপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) সংলগ্ন এই উপজেলার সীমানাটি এমনভাবে বিস্তৃত যার অবস্থান সিটি কর্পোরেশনের চারিদিক ঘিরেই। সিটি করপোরেশনসহ আরএমপি ১২টি থানার অংশবিশেষও পবা উপজেলায় বিদ্যমান। শাহ মখদুম বিমান বন্দরও পবা উপজেলা নওহাটা পৌরসভার অন্তর্গত।
এছাড়াও উপজেলাটিতে রয়েছে একটি সুগার মিল, চারটি জুটমিল, একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১২টি বৃহৎ কোল্ড স্টোরেজ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, একটি সরকারী শিশু পরিবার ও একটি সেফ হোম। এক কথায় জেলার একটি ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হচ্ছে পবা। অথচ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাজ। এতে অনেক জরুরী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলাটির একটি অংশে চরাঞ্চল অবস্থিত। চরের লোকজন জরুরি সব ধরনের সেবা থেকে এমনিতেই বঞ্চিত হন। যে কোনো কাজের জন্য একজন মানুষকে দুর্গম পথ পার হয়ে একাধিকবার সরকারি কার্যালয়ে আসতে হয়। তারপর সেখানে এসে কর্মকর্তা না পেলে ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।
মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসকের পরে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) অবস্থান। সেখানে এই উপজেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ ফাঁকা। মাঠ প্রশাসনে ডিসি ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা সরকারের সকল প্রকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন করে থাকেন।
জানা গেছে, পবা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তাকে আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি। যে কারণে উন্নয়ন কর্মকা- ঝিমিয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- তদারকিকরণ, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও তাদের বাস্তবায়ন।
এছাড়াও অসহায় মানুষদের বিভিন্ন আশ্রয়ণে সংস্থানকরণ, আবাসনবাসীদের ঋণ প্রদান ও তাদেরকে স্বাবলম্বীকরণ, উপজাতিয়দের ঋণ প্রদান তাদেরকে স্বাবলম্বীকরণ যাবতীয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনী বিভিন্ন ভাতা, প্রচলিত আইন মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, স্থানীয় সংস্কৃতি উন্নয়ন, খেলাধুলার মান উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষি উন্নয়ন, সারের ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ নিশ্চিতকরণ, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা উপর্যুক্ত কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকার কারণে এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এই উপজেলায়।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী জানান, প্রায় বছর হতে চলেছে এই উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাই। এরপরেও বর্তমানে ইউএনও’র পদও শূন্য। এই অবস্থায় উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকা- ব্যাহত হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকলেও নিজ নিজ দপ্তর দেখভালের পাশাপাশি এই দপ্তর দেখা অনেকাংশে পিছিয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কোন পদে দায়িত্বশীল নির্দিষ্ট কর্মকর্তা না থাকলে উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাহত হবে এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিঘ্রই পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করবেন।