সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার নারীটি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। স্বামীর সমর্থন, মানবাধিকার সংগঠনের কাউন্সিলরের সহায়তায় তার জীবনের দু:সহ স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক হয়ে উঠছেন। তবে তিনি ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। এমন শাস্তি যা দেশে কোনো পুরুষ আর ধর্ষণ তো দুরের কথা কামনার দৃষ্টি নিয়ে কোনো নারীর দিকে তাকাবে না। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর মেয়েটি স্বামীর সাথে সিলেট এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে গেল ছাত্রলীগের ছয়জন কলেজ ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে। জীবনে ঘটে যাওয়া এ দু:সহ স্মৃতি নিয়ে এখন স্বাভাবিক হয়ে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য নিজ বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির মানুষজনদের অনেক তির্যক কথা তাকে শুনতে হয়েছে। তবে তার স্বামী সব সময় তাকে মানসিক সমর্থন দিয়েছেন। কোনো অপরাধ না করেও ধর্ষণের শিকার হয়ে সামাজিকভাবে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ধর্ষিত নারীকে। দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও ধর্ষণের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। মেয়েটিকে ধর্ষণকারী ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। আদালতে মামলা চলছে।
দায়ের করা মামলার চেয়েও বেশি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অনেক সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ১৯৩ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার এবং ১১২ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ‘কন্যা শিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২১’ এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পারিবারিক শক্রতার জের, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের পর শিশুদের হত্যা করা হয়। একই সময়ে ১২৭ কন্যা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়। যৌন নির্যাতনে নতুন যুক্ত হয়েছে পর্নোগ্রাফি। এ সময় ২১ কন্যাশিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যৌন হয়রানির ঘটনা ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার ১১ জন এবং যৌতুক দিতে না পারায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ জন। ২০১৯ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্য বিবাহ।
ধর্ষণের যে কোনো ঘটনার জন্য দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ধর্ষণের মতো অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায় সেজন্য সব বিভেদ ভুলে দলীয়করণ ভেঙ্গে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সিলেটের মেয়েটি মানবাধিকার সংস্থার কাউন্সিলিং এবং স্বামীর সহযোগীতায় স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও অনেকেই স্বাভাবিক হতে পারেন না। অনেকে আত্মহত্যা করে পৃথিবীকে গুডবাই জানান। আর যারা মরতে পারেন না তারা মানসিক বৈকালংগ নিয়ে বেঁচে অর্ধমৃত অবস্থায় থাকেন। যেখানে শিশু ধর্ষণ বা নির্যাতনের ফলে কন্যা শিশুর মাঝে কি মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তা কি ভাবা যায়। তাই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন, শিশু সুরক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর গঠন, বাল্য বিবাহবন্ধে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা জরুরি।