সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন গত ১৩ অক্টোবর এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্তমুলক রায় ঘোষণা করেছেন। বিচারে শিশুদের সং-শোধনাগারে না পাঠিয়ে বাবা-মায়ের সাথে থেকে সাজা ভোগ করতে তাদের ছ’টি শর্তে মুক্ত জীবনে ফেরাতে চেষ্টা করা হয়েছে। রাতে ৫০টি মামলায় এক বছর করে সাজা দেওয়া হয় ৭০ শিশুর। এ শিশুদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর। ‘দ্যা প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০ অনুযায়ী’ এ রায় দেওয়া হয়। আদালত প্রতিটি শিশুকে একটি ফুল ও একটি ডায়েরী উপহার দেন।
বিভিন্ন অপরাধে পরিবারের সদস্যদের সাথে মামলায় জড়ানো হয়েছিল ৭০ শিশুকে। তারা সবাই শিক্ষার্থী। এজন্য তাদের আদালতে হাজিরা দিতে তাদের শিক্ষার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছিল। এ অনিশ্চয়তা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আদালত দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। রায় প্রকাশ কালে বিচারক যেসব শর্ত পালনের কথা বলেছেন, তা হলো- এক, প্রতিদিন দু’টি ভালো কাজ করা এবং আদালত থেকে দেওয়া ডায়রিতে তা লিখে রাখা এবং বছর শেষে সেই ডায়রি আদালতে জমা দেওয়া। দুই, মা-বাবাসহ গুরুজনদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং মা-বাবার সেবাযতœ করা ও কাজে কর্মে সাহায্য করা। তিন, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা এবং ধর্ম-কর্ম পালন করা। চার, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা। পাঁচ, মাদক থেকে দুরে থাকা। ছয়, ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো। আর এসব তদারকি করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা।
এসব শিশুদের প্রবেশনে দেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আদালত রায়ে বলেছেন, পারিবারিক বন্ধনে থেকে কোমল মতি এই শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশুদের মা-বাবার তত্ত্বাবধানে থেকে শিশুরা ভবিষ্যতে যেন কোনো অপরাধ কর্মে না জড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জীবনের শুরুতে যেন শাস্তির কালিমা তাদের স্পর্শ না করে, সেজন্য শাস্তি না দেওয়া। সং-শোধনাগারে অন্যান্য যারা বিভিন্ন অপরাধে আটকে আছে, তাদের সংস্পর্শ থেকে দুরে রাখা। পরিবারের সংস্পর্শে রেখে শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা করা। সং-শোধনাগারের ওপর চাপ কমানো। সর্বোপরি শিশুদের সার্বিক কল্যাণ করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আদালতের নির্দেশ। এমন রায়ে শিশুদের অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিস্মিত হতভম্ব। তবে সবাই খুশি। এটা একটা দৃষ্টান্ত। বিগত দিনে দেখা গেছে সং-শোধনাগারে যাওয়া শিশুরা ভালো হবার চেয়ে খারাপ বেশি হয়। তাই শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের সুকুমার বৃত্তি বিকাশের সুযোগ দিলে তারা সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে। শিশুদের জন্য এমন মানবিক রায় আগামীতেও দেখতে পাবো বলে আশা করতেই পারি।