বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে আগামী ১১ নভেম্বর চলমান ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অংশ নিচ্ছেন অনেক বিএনপি দলীয় স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা। দলীয় প্রতিকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচনী যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। কারণ দলগত ভাবে নির্বাচন বয়কট করার কথা বলা হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এ নিয়ে দলীয় কোনো মন্তব্য নেই। খোদ মহাসচিবের জেলায় এমন অবস্থান। অন্য এলাকার কথা বাদই দিলাম। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছেন বিতর্কিত ব্যক্তিদের বলে অভিযোগ উঠেছে।
বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিহার ইউপির চেয়ারম্যান ও বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহি-দুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ওই ইউপির সদস্য রায়হানের ছোট ভাই শিমুল মিয়াকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। পক্ষান্তরে মানিকগঞ্জ জেলার ধল্লা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আবারো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্তও করে। উচ্চ আদালতে আপীল করে সোপর্দে ফিরে আসেন। এদিকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখলে অভিযুক্ত শায়েস্তা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার এবারো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আর চারিগ্রাম ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে সরকার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে যুবলীগে যোগ দেওয়া রিপন হোসেন। এদিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইকবাল হোসেন ওরফে ইমাদ ছাত্র জীবনে শিবিরে উপজেলা শাখার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কতুবপুর ইউনিয়ন নির্বাচনের বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল আলমকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে তৃণমূল থেকে নাম না পাঠালেও প্রবাসী ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ থেকে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন সংকট চলছে। তা না হলে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কেন প্রার্থী করা হচ্ছে, ইউপি নির্বাচনের জন্যে প্রতিটি ইউনিয়নে কি ক্লিন ইমেজের লোকের অভাব পড়েছে। মানিকগঞ্জে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৪৬ জন। স্থানীয় পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য নাম প্রেরণ করা হয়। কাজেই প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ার অবকাশ না থাকলেও সেই বিতর্কিতদের নিয়েই পথ চলতে চাইছেন নীতি-নির্ধারকরা। অথচ দুনীতি ও বেআইনি কাজে জিরো টলারেন্সের কথা বার বার বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থীরা ছদ্মবেশে নয় স্বরূপে প্রার্থী হলে তাদের জন্য কল্যাণকর। কারণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভোটে দাঁড়ালে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগানো যাবে না।