দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। টানা পাঁচ দিন দেশের নতুন পরীক্ষার বিপরীতে রোগী সনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে রয়েছে। করোনার সংক্রমণ নিয়ে যে আতঙ্ক, ভয় ছিল, তা ক্রমে কমে আসছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ সনাক্তের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছরের মার্চে এসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। মাঝ খানে কিছু দিন সংক্রমণ কমে এসেছিল। কিন্তু জুনের শেষে রোগী সনাক্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়ায়। জুলাইয়ে পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নেয়। তবে আগস্টের শুরু থেকে সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়া শুরু হয়। সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আমরা অসচেতন ভাবে স্বাস্থ্য বিধিমানা ছেড়ে দেই তবে করোনা কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেবে না। মনে রাখতে হবে করোনা একটি বৈশি^ক রোগ। একটু অসচেতন হলেই করোনা এদেশে তার তৃতীয় ঢেউয়ের আগ্রাসন চালাবে। আমাদের সংক্রমণ কমে গেলেও অন্য দেশে করোনা এখনো সক্রিয় এবং যে কোনো সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার বিনামূল্যে দেশবাসীকে করোনা প্রতিরোধক টিকা দিচ্ছে। দেশবাসী ও টিকা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। টিকার ঘাটতি এখন দেশে নেই। ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ মানুষকে দু’ডোজ টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে, প্রায় পাঁচ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশাবাদী। তিনি মনে করেন আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের ১২ থেকে ১৭ বছরের শিশু শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে।
করোনা সংক্রমণের মহা আতংকের সময়গুলো আমাদের স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। করেনা দুর্যোগ মোকাবেলায় দু’টি দিক ছিল এক সংক্রমণ প্রতিরোধ; দুই সংক্রমিত ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রথম দিকে আমরা রোগী সনাক্তের দিকে পরীক্ষার দিকে জোর দেই নি। পরীক্ষার আরটি-পিসিআর মেশিন, অবকাঠামো খুব সীমিত ছিল। দ্বিতীয়ত; চিকিৎসাসেবাও ছিল অপ্রতুল। আমাদের প্রয়োজনীয় আইসিইউ, অক্সিজেন মাস্ক, ভেন্টিলেটর কিছুই ছিল না। উপজেলা এমনকি জেলাস্তর পর্যন্তও এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারি নি। কাজেই অতীত ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর প্রস্তুতি নিতে হবে।
যাদের টাকা আছে, তারা দেশের পাঁচ তারকা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। মন্ত্রী, আমলারা যান বিদেশে। অথচ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাই বলেন, এখন বাংলাদেশ চিকিৎসাসেবায় অনেক এগিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে বেড়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কিন্তু যখন দেখি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী আমলারা তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন, তখন আমাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হচ্ছে, এমন কথা শোনা যায় না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও তার দেশেই চিকিৎসা নেন। এমনকি নেপালের প্রধানমন্ত্রীও তার দেশে চিকিৎসা নেন। তাহলে আমাদের এখানে কেন দেশীয় চিকিৎসকরা ভরসা দিতে পারেন না। তাই আগামীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক থেকে বের হওয়া যায় সে চেষ্টা করতে হবে।