ই-কমার্স খাতে প্রতারণা বন্ধে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ই-কমার্স খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা রেগুলেটরি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাছাড়া প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। ভবিষ্যতে নিবন্ধন ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসা করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ সংক্রান্ত গঠিত ১৬ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে নতুন নীতিমালা করা হবে। আজ মঙ্গলবার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকেই ই-কমার্স খাতের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়নে বিদেশী উন্নত রাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করা হবে বলে জানা যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ই-কমার্স এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে ই-কমার্স খাত জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সরকার যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে। সেজন্যই নতুন নীতিমালায় বিতর্কিত ও আলোচিত ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, রিং আইডি কিংবা ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা চিরতরে বন্ধের কৌশল থাকবে। নতুন নীতিমালায় গ্রাহক স্বার্থকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত করা হবে।
সূত্র জানায়, অনলাইন শপিং বাংলাদেশে দ্রুত প্রসার ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে অনলাইন শপিং আরো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু পণ্য ডেলিভারি, পেমেন্ট ব্যবস্থা, উদ্যোক্তাদের অদক্ষতা, অর্থায়ন এবং ভোক্তাদের অজ্ঞতার মতো বিষয়গুলোর কারণে নতুন ওই ব্যবসায়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- প্রশ্নের মুখে পড়ায় ই-কমার্স ব্যবসা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ওসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাতে ই-কমার্স পরিচালনা নীতিমালা সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ উল্লেখ থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের অন্তত ডজনখানেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কেনা পণ্য দিচ্ছে না। এমনকি গ্রাহকরা টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। কোন কোন প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে পাওনার বিপরীতে ব্যাংকের চেক দিয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকায় তা ফেরত আসছে। সেজন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর এখনো মামলা বাইরে রয়ে গেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ওসব প্রতিষ্ঠানের কাছে সব মিলিয়ে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের পাওনা কত তার কোন হিসাব নেই। তবে পুলিশ, র্যাব, গ্রাহক ও মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের ৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা পাওনার তথ্য মিলেছে।
এদিকে বর্তমান করোনা মহামারীর মতো দুর্যোগে নগরবাসীর অনেকের কাছেই অনলাইন শপিং ভরসা হয়ে উঠেছে। যে কারণে গত কয়েক বছরে দেশে ই-কমার্স খাতে প্রায় ২০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অনলাইন শপিংয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার পণ্যের ডেলিভারি হচ্ছে। শুধু অনলাইনে বছরে বেচাকেনা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগও এসেছে। বিশ্বসেরা ই-কমার্স কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনা করছে। বিদেশী কোম্পানিগুলো ই-কমার্স খাতে ৪৯ শতাংশ বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর বাকি ৫১ শতাংশের মালিকানা সরকার কিংবা বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমেও কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে পেজ খুলে অনলাইনে ব্যবসা করছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনটি নির্ভরযোগ্য সাইট তা বোঝা কঠিন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে কমিটি সুপারিশ করবে। বিধিমালা অনুসারে নতুন করে আইন প্রণয়ন ও অথরিটি গঠনে ওই কমিটি কাজ করবে। আর আগে যে আইন ও নির্দেশনাটি করা হয়েছিল সেখানে ব্যাপক পরিবর্তন এনে নতুন ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা করা হচ্ছে। নতুন আইনের মধ্যে সবকিছু সন্নিবেশিত থাকবে এবং নতুন আইনটি প্রণয়নে বিদেশী মডেল অনুসরণ করা হবে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের ডিজিটাল কমার্স আইন অনুসরণ করবে কমিটি।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দেশের ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা আনতে একটি রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল প্রতারণা হলে যেন বিচার করা যায় সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট এবং মানিলন্ডারিং এ্যাক্টে কিছু সংশোধন আনতে হবে। ওই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা একমত হয়েছেন।