আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এসব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু সেই ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ কি খুব একটা চোখে পড়ে? বরং শিক্ষা বিভাগের কিছুকিছু কর্মকা- আমাদের অবাক করে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দেশের ছয়টি সরকারি কলেজে উর্দু বিভাগ রয়েছে। কিন্তু গত ৩৫ বছরে সেসব কলেজে এই বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। অথচ পুরো সময়জুড়েই বিসিএসের মাধ্যমে এসব বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়োগকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলেও এতদিন তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেননি। বিষয়টি অনেকের নজরেই আসেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, ‘ব্যাপারটি আমরা বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করব।’
উর্দু বিভাগ থাকা সরকারি কলেজগুলো হলোÑরংপুরের কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, সিলেট আলিয়া মাদরাসা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজ। বর্তমানে তিনটি কলেজে তিনজন এবং মাউশির দুই অধিদপ্তরে দুজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। তাঁদের নিয়োগ হয়েছে ২৬তম এবং ৩৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে। কোনো বিদেশি ভাষা শিক্ষার যদি চাহিদা থাকে, শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে সে শিক্ষা চলতেই পারে। কিন্তু ৩৫ বছর ধরে যে ভাষার কোনো শিক্ষার্থী নেই, কিছু কলেজে সেই ভাষার বিভাগ চালু রেখে কী হবে? শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক দেশেই পড়তে যান। জার্মানি, জাপান, কোরিয়াসহ অনেক দেশে তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থী যে দেশে যাবে সে দেশের ভাষা জানা থাকলে তাঁর জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সহজতর হবে। আবার কাজের জন্যও অনেকে অনেক দেশে যান। সেসব দেশের ভাষা জানা থাকাটাও তাঁদের জন্য জরুরি। সেসব ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেসব ভাষা কলেজে, নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে, নাকি কোনো ইনস্টিটিউটে শেখানো হবে, কতটুকু শেখানো হবেÑসেসব শিক্ষাক্ষেত্রের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে ঠিক করতে হবে।
আমাদের সম্পদ কম, সামর্থ্যও কম। শিক্ষায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা আমরা করতে পারি না। তাই এই সীমিত সামর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীহীন এই বিভাগগুলোর ব্যাপারে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এটাই কাম্য।