পরিবার নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে সবাই ব্যস্ত থাকে জীবিকার তাগিদে। তারই ধারাবাহিকতায় নিজের সংসারের খরচ জোগাতে বেঁচে নিয়েছেন পছন্দ অনুসারে দুধ বিক্রি ব্যবসা।
একই এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে এই দুধ বিক্রি করে অর্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের খরচ চালান মোঃ বেলাল হোসেন। ব্যবসায়ী মোঃ বেলাল হোসেন(৫৭), মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউপির মুসলিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
তিনি নিজ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে দুধ কিনে তা নিয়ে আসেন জেলা শহরে। এখানে এনে পৌর এলাকার মাস্টার পাড়া গ্রামে তিনি মানুষের কাছে বিক্রি করেন। সবার ঘরের সামনে গিয়ে বোতলে ভরে হাতে তুলে দেন গ্রাহকদের।
একই গ্রামের মধ্যে স্থানীয় লোকের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকা মানুষের কাছেও বিক্রি করেন তিনি। এই গ্রামে অনেক মানুষ চাকরির সুবাদে এসে থাকে। আবার চলে যায়। কিন্তু দুধ বিক্রেতা বেলাল হোসেনের পরিবর্তে কেউ দুধ বিক্রি করতে আসেন না। ৩১ বছর ধরে তিনি এই গ্রামে দুধ বিক্রি করেন।
বিয়ের পর তিনি নিজের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলো। পরে এই দুধ ব্যবসার কথা মাথায় আসে তার। ১৯৯০ সালে প্রথম তিনি নিজের গ্রাম থেকে ঘুরে ঘুরে দুধ কিনে জেলা শহরের এই গ্রামে এনে বিক্রি করতেন।
তিনি যখন প্রথমে দুধ বিক্রি শুরু করেন তখন ১০ টাকায় কেজি কিনে বিক্রি করতেন ১২ টাকায়। প্রতিদিন বিক্রি করতেন ৬০-৭০ কেজি। লাভ হতো ১০০-১৫০ টাকা। অর্জিত টাকা দিয়েই চলতো তার সংসার। বর্তমান সময়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় কিনে বিক্রি করেন ৯০ টাকায়। লাভ হয় ৫০০-৭০০ টাকা। এতেই চলে তার পরিবার। কিন্তু আগের তোলনায় দুধের পরিমান অনেক কমে গেছে। পুরো গ্রাম ঘুরে ২০-৩০ কেজির বেশি পাওয়া যায়না। যার ফলে আয় কমে গেছে অনেক।
মোঃ বেলাল মিয়ার পারিবারিক জীবনে ৭ সন্তানের পিতা। ৩ ছেলো ও ৪ মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ও দুই ছেলোকে বিয়ে করিয়েছেন। একজনের দুধ বিক্রির আয় দিয়ে করতে হচ্ছে সবকিছু। বাকী দুই ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করেন বর্তমানে।
দুধ কেনা বেচার পাশাপাশি বাড়তি সময়ে তিনি ৪ কানি জমি চাষ করেন। তা দিয়েই চলে পুরো বছরের খোরাকী। এতে করে নিজের উপর চাল কেনার প্রভাব থেকে মুক্তি পায় তিনি।
এই ব্যবসা করে তিনি অর্জন করেছেন কিছু সম্পত্তি। তা থেকেও বর্তমানে আসে কিছু আয়। সব মিলিয়ে পরিবার নিয়ে আছেন অনেক সুখে। কারো কাছে কিছু চাইতে হয়না তার। একই গ্রামে ৩১ বছর ধরে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে কখনো কোনো বাঁধার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। যারা দুধ কিনে তারা খুব আপন করে নিয়েছে বেলালকে। অন্য কেউ এই গ্রামে দুধ বিক্রি করতে আসলে তাদের কাছ থেকে নেয়না কেউ। তাই তিনি একাই ৩১ বছর এখানে আপন হয়ে বিক্রি করছেন দুধ।
দুধ ক্রেতা তাপস ত্রিপুরা জানান, আমি অনেক বছর ধরে ওনার কাছ থেকে দুধ কিনি। অন্য অনেকের চেয়ে ওনার দুধ ভালো মানের। বাসায় এনে দিয়ে যায় তিনি। এই এলাকায় আর কেউ বিক্রি করতে আসেনা। কারণ ওনার কাছ থেকে ছাড়া আর কারো থেকে কিনেনা এই গ্রামের মানুষ। ওনাকে এখানকার সবাই খুব বিশ্বাস করে। ওনি কখনো খারাপ দুধ দেয়না।
ক্রেতা বিথী হাওলাদার বলেন, আমি চার বছর ধরে ওনার কাছ থেকে দুধ কিনি। ওনি অনেক যতœ সহকারে বাসায় দিয়ে যায়। কখনো ওনার কাছে অন্যায় কিছু দেখিনী। ওনি অনেক ভালো। ওনি যে দুধ দিয়ে যায় তা এখন প্রতি কেজি ৯০ টাকা রাখেন। কিন্তু কখনো দুধে কিছু মিসায় না। যার ফলে দুধ খেয়ে অনেক মজা পাওয়া যায়। খেতে খুব স্বাদ।
দুধ বিক্রেতা মোঃ বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, আমি ৩১ বছর ধরে এই গ্রামেই দুধ বিক্রি করি। অন্য কোথাও যাইনা। যে দুধ মাইসছড়ি থেকে আনি তা এখানে দিয়েই শেষ হয়ে যায়। এখানকার মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও তাদের সাথে কখনো মিথ্যা বলিনা। দুধের সাথে কিছু মিসাইনা। যেভাবে কিনে আনি ঠিক ঐভাবেই এখানে বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই ব্যবসা দিয়েই আমার সবকিছু চালাতে হয় তাই আমি চেষ্টা করি সৎভাবে করতে। কারো যেনো মনে কষ্ট না যায়। তাই সবাই আমাকে বিশ্বাস করে। আমিও যতো বছর এই ব্যবসায় থাকি চেষ্টা করবো সবার মন রক্ষা করে ব্যবসা করতে।