শীত মৌসুম কে সামনে রেখে নাটোরের লালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছেন গাছিরা। শীতকাল এলে বাড়ে খেজুরগাছের কদর। গ্রামীণ জীবনে খেজুরগাছকে ঘিরে শুরু হয় উৎসব। তাই খেজুরগাছের কা- কেটে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছেন বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালপুরে প্রায় ৩৩ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। উপজেলায় সড়ক, রেললাইনের দুই ধার, জমির আইল, বাড়ির আঙিনাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার পরিবার খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল। খেজুরের গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। তাই এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। ঝোপ, জঙ্গলে কোনো যতœ ছাড়াই বেড়ে ওঠে খেজুরের গাছ। শুধুমাত্র শীত মৌসুমে নিয়মিত পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার মোমিনপুর গ্রামে দেখা গেছে, সকালে খেজুরগাছ পরিষ্কার করতে ব্যস্ত গাছিরা। খেজুরগাছের কাঁটাযুক্ত ডাল কেটে নতুন কা- বের করছেন তাঁরা। কা- কেটে পরিষ্কার করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছেন।
গাছি লতিফ সরকার (৬৫) বলেন, খেজুরগাছের কা- পরিষ্কার করে চেঁছে ১৫ দিন শুকাতে হয়। এরপর বিশেষ কৌশলে কা-ের কিছু অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস সংগ্রহে ও মাটির হাঁড়ি বসানোর জন্য বাঁশের তৈরি কাঠি লাগানো হয়। গাছ থেকে রস বের করার জন্য প্রতিদিন কা-ের কিছু অংশ চেঁছে ফেলতে হয়। একাধারে তিন দিন শুকাতে হয়। শুকনা কাঠির রস খেতে সুমিষ্ট হয়।
আরেক গাছি শাহজাহান আলী (৬০) বলেন, তিনি প্রতিটি গাছ পরিষ্কারের জন্য পান ৪০ টাকা। একজন গাছি প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুরগাছের রস সংগ্রহ করতে পারেন। একজন গাছি শীত মৌসুমে (১২০ দিনে) একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় সংগ্রহ করেন।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার কৃষকদের খেজুরগাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাঁরা। এতে রস ও গুড়ের চাহিদা মিটানো ছাড়াও খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনেন। রস-গুড় ছাড়াও খেজুরগাছের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি ও জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার হয়।