ডাক্তার চেম্বারে বসে যখন মোবাইল ফোনে ব্যস্ত, হাসপাতালের ঝাড়ুদার তখন ডাক্তারি কাজে ব্যস্ত। এমন কান্ড ঘটেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের অবহেলায় জিয়াউল হক (৬৫) প্রকাশ জিয়া মোল্লা নামের এক রোগীর মৃত্যুর হয়েছে। মৃত ব্যক্তি মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মুসলিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বুধবার (৩ নভেম্বর) বিকালের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে।
এ ঘটনায় বেলা চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (সেকমো) দিপঙ্কর ধর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলমকে প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে নিহতের স্বজনরা। এছাড়াও কর্তব্যে অবহেলায় আরো দুই চিকিৎসকের অপসারন দাবী করেন তারা।
নিহত জিয়াউল হক জিয়া মোল্লার ছেলে মো. আল আমিন বলেন, দুপুরের দিকে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ সময় ইমারজেন্সিতে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (সেকমো) দিপঙ্কর ধর কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি আমার বাবার চিকিৎসা না করে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। আমার বাবার খুব শ্বাসকষ্ট হলে আমি বার বার চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি 'নো মাস্ক নো সার্ভিস' এর কথা বলেন।
এদিকে রোগীর ভগ্নিপতি মাক্স নিয়ে আসলে তখনও মোবাইল ফোনে ব্যাস্ত ডাক্তার। হাসপাতালের ঝাড়ুদারকে বলা হয় অক্সিজেন লাগাতে। ঝাড়ুদার অক্সিজেন লাগাতে ব্যর্থ হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়। অবহেলা না করে সঠিক সময়ে ডাক্তার চিকিৎসা সেবা ও অক্সিজেন লাগালে হয়তো বাবা প্রাঁণে বেঁচে যেত।
এদিকে জিয়াউল হক প্রকাশ জিয়া মোল্লার মৃত্যুর খবরে তার স্বজনসহ স্থানীয়রা হাসপাতালে ভীড় করে। এ সময় তারা মৃত্যুর জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসককে দায়ী করে তার শাস্তি দাবী করেন। খবর পয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় হাসপাতালে ছুটে যান মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক।
মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের কর্মকর্তা ইনচার্জ মুহাম্মদ আলী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং নিহতের স্বজনসহ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি।
অভিযুক্ত চিকিৎসক দীপঙ্কর ধর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর কন্ডিশন খুবই খারাপ ছিল। ফোনে কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগী আসার পর পর আমি ফোন কেটে দেই। তখন ইমারজেন্সীতে আরো ৩ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলম বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ সত্য নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে গাফেলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।