সরকারী ভাবে কোনো ভ্যাকসিনও সরবারাহ নেই। শুধু আমাদের গ্রামে নয় পুরো উপজেলায় প্রায় কয়েকশ গরু ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা খুব চিন্তার মধ্যে আছি। জানি না ভাগ্যে কি আছে। হতাশাগ্রস্থ হয়ে কথা গুলো বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের আল-মামুন। আল মামুনের মত উপজেলার অসংখ্য খামারিরা গরুর ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগ নিয়ে চিন্তিত।
চারঘাটে ভাইরাসজনিত সংক্রামক ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। ভ্যাকসিন সরবারাহ না থাকায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
জানা যায়, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (পক্স জাতীয়) গবাদিপশু, বিশেষ করে গরুর নতুন একটি রোগ এটি। ল্যাম্পি স্কিনের ভাইরাসটির উৎপত্তি আফ্রিকায়। এরপর ভারতে এটি দেখা যায়। সম্প্রতি অন্য দেশ থেকে আসা গরুর মাধ্যমে এই জীবাণু দেশে প্রবেশ করেছে।
প্রথমে গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়ে গুটি গুটি হয়ে ঘা এ পরিণত হয়। এ সময় শরীরে ১০৪-১০৭ ডিগ্রী তাপমাত্রার জ¦র দেখা দেয়। মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে এবং গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থান পঁচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুইটির অধিক গাভী থাকলে খামার বলে সেই মর্মে চারঘাটে সাড়ে নয়শ গরুর খামার রয়েছে। প্রতিদিনই উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে ৫ থেকে ৬ টি গরু ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। উপজেলায় এখন ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগে প্রায় দেড় শতাধিক গরু আক্রান্ত।
বুধবার ঝিকরা মন্ডলপাড়া গ্রামের খামারি আবু শামার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই আমার গরুর শরীরে বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠা শুরু করে। এরপর গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসক বলছেন রোগ ভালো হতে সময় লাগবে। অনেক জায়গায় শুনছি গরু মারাও যাচ্ছে। তাই গরু নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি।
উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম মিঠু বলেন, এটি ভাইরাস জনিত রোগ। প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত গরু আসছে। আক্রান্ত গরুগুলোকে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। তাই আমরা খামারে গিয়ে এর আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আগে দুই একটা এ রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও বর্তমানে পাদুর্ভাব বেড়েছে। সরকারি ভাবে ভ্যাকসিন সরবারহ নেই। তবে আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দেবার চেস্টা করছি।