তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে নতুন করে বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য ২৫২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘শি পাওয়ার প্রকল্প: প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন-২য় পর্যায়’ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর আশাবাদী শিগগিরই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন হবে। আর অনুমোদন পেলে অধিদপ্তর দেশের ৪৪ জেলার ১৩০টি উপজেলায় ওসব উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ শুরু করবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২৫২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪০০ নারীকে আইটি সার্ভিস প্রভাইডার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তাছাড়া ১০ হাজার ৪০০ নারীকে উইমেন ফ্রিল্যান্সার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, ১ হাজার ৭৫ নারীকে উইমেন কল সেন্টার এজেন্ট-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং ৩ হাজার ২৫০ জন নারীকে উইমেন ই-কমার্স প্রফেশনাল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আর শুধু প্রশিক্ষণই নয়, সফল প্রশিক্ষণার্থীদের ল্যাপটপ কেনার জন্য আর্থিক অনুদান দেয়া হবে। প্রশিক্ষণকালীন শিক্ষার্থীদের ভাতাও দেয়া হবে। পাশাপাশি একটি একক নারী উদ্যোক্তা প্লাটফর্ম তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পার্টনারশিপ স্থাপন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে ১৪০টি সেমিনার আয়োজন ও প্রচার চালানো হবে। এমনকি চাকরি মেলারও আয়োজন করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় গ্রহণের আগে দেশব্যাপী সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২১টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় অবশিষ্ট জেলাগুলোতে প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃক্ষের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবে। আর প্রশিক্ষণ শেষে আইসিটি বিভাগ থেকে সনদ দেয়া হবে। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫ মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আর প্রশিক্ষণের পর এক মাসের একটা মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম করা হয়েছে। যাতে উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণের বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে পারে। তাছাড়া প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একটি গাইডলাইন রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। ওসব প্রশিক্ষণে যারা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হবে, সরকার তাদের একটি ল্যাপটপ কেনার জন্য ২০ হাজার করে টাকা দেবে। ল্যাপটপ কেনার জন্য বাকি টাকা সহজ শর্তে ঋণ কিংবা সম্ভব হলে প্রার্থী নিজেই পরিশোধ করবে। প্রশিক্ষণগুলো উপজেলা পর্যায়ে হবে।
এদিকে এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানান, এ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। সেটার ওপর পিইসি সভাও হয়েছে। তবে সভায় কিছু বিষয়ে স্পষ্ট করে জানাতে বলা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে এখন কাজ করা হচ্ছে। পিইসির জিজ্ঞাসা অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে আগামী ৩ তারিখের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তারপর পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করবে।