শেরপুর জেলার কৃষকরা ড্রাগন ফল চাষে সাফল্য
পাওয়ায় এখন ফণিমণসা জাতীয় এই ফলটি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ইতোমধ্যে ড্রাগন
ফল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেক কৃষক। আর কৃষকদের মাঠ
পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। গত ২০১২
সালে শেরপুরের নকলা-নালিতাবাড়ীর সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম
মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশে জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টার নকলার ৩২০ জন
প্রান্তিক কৃষককে ফলের কাটিংকৃত চারা সরবরাহ করে। তাদের প্রশিক্ষণ
দেওয়াসহ বিনা খরচে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ কাজে
লাগিয়ে নকলার বানের্শ্বদী ইউনিয়নের মোজার বাজার, পোলাদেশী, বাওসা,
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর, বাছুর আলগা এলাকার অর্ধশতাধকি কৃষক
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগনের আবাদ করে লাভবান হন। এখন অনেকেই কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লাল বারী-১ জাতের ড্রাগনের খামার শুরু করেছেন।
নকলা উপজেলার নারায়ণ খোলার সাইলাম পুরের আজিজুল হক বাড়ির আঙিনায় শতাধিক
গাছের এশটি বাগান করেন। শহরের পাইকারদের কাছ থেকে ফল বিক্রির চাহিদা
পেলেও স্থানীয়ভাবে বাজার তৈরির জন্য এলাকাতেই ড্রাগন বিক্রি করছেন।
আজিজুল হক বলেন, তার বাগানে দু থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করেছে।
চলতি মৌসুমে তিনি ৩৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করে ফেলেছেন। বাগানে এখনো
অনেক ফল রয়েছে। লাভও ভাল হচ্ছে। আজিজুল হককে দেখে স্থানীয় শাহ জাহান আলী,
সিরাজুল হকসহ অন্যরাও শুরু করেছেন ড্রাগন ফল চাষ। অনেকেই বসতবাড়ির আঙিনা
ও অনাবাদী জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। পরিবারের জন্য বিষমুক্ত তাজা ফল নিতে
অনেকেই শহর থেকে সরাসরি বাগানে আসে। ড্রাগনের সাথে সবাই পরিচিত না হলেও
স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা রয়েছে।
নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসেন ড্রাগন বাগানে ফল নিতে এসে বলেন,
সুস্বাদু ও লোভনীয় এই ফলটি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। ড্রাগন ফলের অনেক
ভেজষ ও ঔষধি গুণ রয়েছে। ড্রাগন ফল কোলেস্ট্রেরল কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এটি হৃদযন্ত্র ভালো রাখতেও সহায়ক। আমি আমার পরিবারের জন্য ফরমালিন
মুক্ত তাজা ফল নিতে বাগানে এসেছি। আমি নকলা ও নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন বাগান
হতে পরিবারের জন্য তাজা ড্রাগন সংগ্রহ করি। এই বাগান দেখতে আসা আয়েশা হক
নামের এক শিক্ষার্থী বলেন,ড্রাগনে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এ ফলটি
অনেকটা পিচ্ছিলজাতীয় হওয়ায় এটি হজমে অনেক ভালো। প্রত্যেক বাড়িতে যদি চার
পাঁচটি করে ড্রাগনের গাছ লাগানো যায় তাহলে সেখান থেকেই পুষ্টির পারিবারিক
চাহিদা মেটানো সম্ভব।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন,
বিদেশি ফল ড্রাগন ভিটামিন সি, মিনারেল ও আঁশ সমৃদ্ধ। দুই বছর আগেও
শেরপুরে এটি সীমিত আকারে চাষ হয়েছে। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই
ব্যাপকভাবে ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। তাই এতে
লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। আধুনিক ও পুষ্টিকর এ ফলের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও
ঝুঁকছে। তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জেলার অন্যান্য ফলের
মধ্যে ড্রাগনও বড় একটা স্থান দখল করবে।