রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নে নৌকা সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংঘর্ষ ও মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সংলগ্ন ও একদিলতলা হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী পক্ষের আহতরা হলেন বাকশিইল ইউনিয়নের ২ং ওয়াডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর গফুর (৫০), ছেলে কিরণ (২৭), মাসুদ রানা (৩৪), রাসেল হোসেন (২০), শাহীন আক্তার (২৮)। বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নূর হোসেন (৬০), সোহেল রানা (৩০), সামশাদ আলী (৩৫)। এ ছাড়া অন্য আহতদের নাম পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে নির্বাচনে মোহনপুরের বাকশিমইল ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আল মোমিন শাহ এলাকায় শো-ডাউন দিয়ে এলাকাবাসীকে জানান দিতে চেয়েছিলেন যে তিনি নির্বাচনে আছেন। এজন্য বর্তমান চেয়ারম্যান সমর্থিত কর্মীরা বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের দিকে মোটরসাইকেল ও ভ্যানযোগে যাচ্ছিলেন। পথে মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সামনে নৌকা সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এতে তারা পিছু হটলে কিছু দূরে গিয়ে একদিলতলা হাটে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুইপক্ষের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আল মোমিন শাহ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর এলাকার (সইপাড়া গ্রামের) কিছু লোক মোটরসাইকেল, ভ্যানে করে পরিষদের দিকে আসছিলেন। তিনিসহ আরও কয়েকজন তাঁরা গ্রামের মানুষগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আগেই সিদ্ধান্ত ছিল, তাঁরা এলাকায় একটু শো-ডাউন দিয়ে জানাবেন তিনি ভোটের মাঠে আছেন। কিন্তু পথেই তাঁরা নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হন। আগে থেকেই তাঁরা রাস্তায় লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা করে। এতে তাঁর অন্তত ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা পর্যন্ত করানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, তিনি ইউনিয়নে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগকে তোষামোদ করে চলতে পারেননি চেয়ারম্যান থাকাকালে। এ কারণে তাঁকে এবার মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়নি। তিনি আজকের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিবেন।
এ বিষয়ে নৌকা সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নান বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন আহতদের দেখতে। এ বিষয়ে জানতে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ফোন দিতে বললেন।
মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, আল মোমিনকে গতবছর নৌকার প্রতীক দিয়ে তাঁরা নির্বাচিত করেছিলেন। তিনি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আজকেও তিনি পরিষদে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। তিনি কথা বলতে আসেননি। এলাকায় মোমিন নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করছে বলে কিছুটা উত্তেজনা আছে। তাঁরা আজকে এলাকায় শো-ডাউন করতে চেয়েছিল। হঠাৎ সেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নৌকার সমর্থকদের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী কারও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাকশিমইল ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে এবার মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তিনজন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন স্বতন্ত্রপ্রার্থী মাহবুব আর রশিদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৮ নভেম্বর।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে দুই পক্ষে মোট সাতজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো কোনো পক্ষ থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।